হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিনে ২টি জটিল অপারেশন

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিনে ২টি সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২ জন অস্বচ্ছল ও অসহায় পরিবারের মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের মূত্রথলির পাথর এবং অন্যজনের এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করা হয়। অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি তাদের সরকারিভাবে বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১নং ওয়ার্ড বলাখাল এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুস ছোবহানের (৬৫) মূত্রথলির পাথর ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চরবাকিলা গ্রামের কিশোর মো. কাউছার হোসেনের (১৪) এপেন্ডিসাইটিসের অপরাশেন করা হয়।
অপারেশনকৃত রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে এবং তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে বিষয়টি জানার পর হাসপাতালে আগত রোগী ও তাদের স্বজনসহ স্থানীয় ও এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারীসহ সিজারিয়ান অপারেশন এবং প্রতি সোমবার অন্য রোগীদের জটিল ও কঠিন রোগসমূহের অপারেশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার আব্দুস ছোবহানের মূত্রথলি থেকে পাথর ও কাউছার হোসেনের এপেন্ডিসাইটের অপারেশন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসানের (ইউএইচএফপিও) সার্বিক তত্ত্বাবধানে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করেন মেডিকেল অফিসার ও ইউরোলজিস্ট ডা. মো. মমিনুল হায়দার, মেডিকেল অফিসার ও নিউরোসার্জন ডা. মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম। এর আগে রোগীদের অজ্ঞান কার্যক্রম পরিচালনা করেন মেডিকেল অফিসার ও এনাস্থেসিস্ট ডা. আবিদা সুলতানা।
এছাড়া অপারেশন টিমে ছিলেন মেডিকেল অফিসার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞা ডা. মোহাম্মদ মহিবুল আলম রুবেলসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সেবিকা (নার্স) হালিমা ও বৃষ্টি। বর্তমানে আব্দুস ছোবহান ও কাউছার হোসেন সুস্থ আছেন এবং তারা চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
এদিকে একদিনে ২টি জটিল অপারেশন হওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিরা। অপারেশনের দিন দুই পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের হাসপাতালের বারান্দায় ছুটোছুটি দেখে মানুষ ঝড়ো হতে থাকে। পরবর্তীতে সফল সফল অপারেশনের বিষয়টি জানতে পেরে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রশংসা করতে থাকেন।
কথা হয় প্রসূতি চিকিৎসাধীন আব্দুস ছোবহান ও কাউছার হোসেন এবং তাদের পরিবারের সাথে। তারা সবাই চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এতো ভালো চিকিৎসা হাসপাতালে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) পাবো। তা তারাই কখনোই ভাবেননি। এজন্য তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. আহমেদ তানভীর হাসানের সাথে। তিনি ওটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অপারেশনকৃত দুইজনেই সুস্থ আছেন।
তিনি বলেন, মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুবিধায় ইতোমধ্যে চাহিদার প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতির পেয়ে আগের চেয়ে একটু বেশি সেবা দিতে পারছি। সেবার মান বৃদ্ধি করতে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। আশা করি, আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি, তাহলে স্বপ্নের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পর ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার হয়নি। এতে করে অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র, ডায়াথার্মি মেশিন, সাকার মেশিন, হাইড্রোলিক ওটি টেবিল, অটোক্লেভ যন্ত্র, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি), স্ট্যান্ডবাই ওটি ও সিলিং লাইট, স্টাবিলাইজারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক লাইন অকেজো ও অপরাশেনের বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়।
ওই (২০২২) বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে ডা. মো. গোলাম মাওলা যোগদানের পরেই নজর দেন অপারেশন থিয়েটারের দিকে। প্রথমেই তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে অপারেশন থিয়েটার চালুর ব্যবস্থা করেন। এক এক করে সকল সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ওই বছরের ১৪ আগস্ট রাখি সাহা নামের একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর সিজারের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটারটি চালু করা হয়।
এরপর থেকে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারি, সিজার, হার্নিয়াসহ যে সকল অপারেশন সম্ভব, তা করা হচ্ছে। বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর এবং সেবার মান ভালো হওয়ায় আশপাশের উপজেলার রোগীরাও আসছেন এ সরকারি হাসপাতালে। এতে করে প্রতিনিয়ত সেবাগ্রহিতার সংখ্যা বাড়ছে।

১০ ডিসেম্বর, ২০২৪।