এস এম সোহেল
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রিয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ.ন.ম. এহসানুল হক মিলনকে চট্টগ্রামে আটকের পর চাঁদপুরের আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। গত শুক্রবার দুপুর ১১টায় চাঁদপুরের অতিরিক্ত সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিউ আজমের আদালতে হাজির করা হয়। পরে এই আদালত সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিলনকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
গত ১২ নভেম্বর সাবেক এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ.ন.ম. এহসানুল হক মিলন চিকিৎসা শেষে লন্ডন হতে দেশে আসেন। তারপর তিনি চাঁদপুরের আদলতে বিচারাধীন ২৬টি মামলার হাজিরা ও জামিনের প্রস্তুতি নেন। ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহীনি মিলন দেশে আসছে খবর পেয়ে তাকে আটকের জন্য কচুয়ার গ্রামের বাড়ি, ঢাকার বাসা ও শ্বশুরালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন বলে তার স্বজনরা দাবি করেন। ঐ অভিযানে মিলনকে আটক করতে না পেরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাঁদপুর আদালতে ব্যপক নিরাপত্তা জোরদার করে।
মিলনের স্ত্রী ও কেন্দ্রিয় মহিলা দলের নেত্রী নাজমুর নাহার বেবি নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বলেন, মিলন যাতে আদালতে হাজির হতে না পারেন, সেজন্য আদালত এলাকায় ব্যাপক নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তার স্বামীকে গুম করার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাই মিলনকে আদালতে হাজির হওয়ার সুযোগ প্রদান ও আটক বা গুম না করার জন্য আইনী সহায়তা চান।
নির্বাচন কমিশন কোন সহায়তা প্রদান না করায় মিলন চট্টগ্রামের নগরীর চকবাজার থানার ৪৫২ চট্টেশ্বরী রোডের অবস্থিত তার বন্ধুর ‘মমতাজ ছায়ানীড়’ নামে একটি বাসায় অবস্থান করেন। চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় তাকে গ্রেফতার করে।
পরে তাকে চট্টগ্রাম থেকে তাকে চাঁদপুরে নিয়ে আসা হয়। পরে বেলা ১১টায় চাঁদপুর আদালতে হাজির করা হয়। শুক্রবার কোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ফলে আদালতের বিচারক তাকে ৩টি মামলায় আটক দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে।
মিলন আটকের সংবাদে সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে শত-শত বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত হতে থাকে এবং তাকে মুক্তি দিতে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময়ে মিলনের জামিন আবেদনের জন্য জাতীয়তাবাদী দলের আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত হন।
মিলনের আইনজীবীরা জানান, তার বিরুদ্ধে আদালতে ২৬টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মামলার আটকাদেশ ছিলো। আদালত তার মধ্যে সিআর ৯৩/১৫, ২১২/১৫ ও জিআর ১৪/১৫ নম্বর মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামি ২৫ নভেম্বর ফের তাকে আদালতে উপস্থিত করা হবে। আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় মিলন উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান।
আদালত প্রাঙ্গণে মিলনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবি উপস্থিত ছিলেন। তিনি সংবাদকর্মীদের কাজে অভিযোগ করেন, সরকার প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে মিথ্যা অভিযোগে মামলা-হামলা দিয়ে তার পরিবারকে হয়রানি করে আসছে। যাতে মিলন সম্ভাব্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন, মিলন নির্বাচনে অংশ নিবেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।
আদালত চত্বরে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনের সাথে দেখা করে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মিলন ভাইয়ের সাথে আমরা দেখা করেছি এবং কথা বলেছি। তিনি সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। তিনি ডায়াবেটিকসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। সময়মতো ঔষধ খেতে হয়। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমরা আশা করি মিলন ভাই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে অচিরেই বের করে নিয়ে আসবো।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোতে তিনি জামিনে ছিলেন। দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসায় থাকায় ওয়ারেন্ট হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো সবগুলো জামিনযোগ্য। মিলন ভাই চাঁদপুর জেলখানায় থাকতে চান। আমরা চাঁদপুরে আছি, বিভিন্ন সময় খোঁজ-খবর নিতে পারবো। আমাদের চাওয়া, মিলন ভাইকে চাঁদপুর জেলখানায় রাখা হোক।
আদালত চত্বরে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনের সাথে দেখা করেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জি. মমিনুল হক, কেন্দ্রিয় বিএনপির সদস্য সফিকুর রহমান ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাড. সলিম উল্ল্যাহ সেলিম, দেওয়ান মো. সফিকুজ্জামানসহ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
এসময় আ ন ম এহসানুল হক মিলনের আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. কামরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, অ্যাড. জাকির হোসেন ফয়সাল, অ্যাড. আব্দুল্লাহ হিল বাকী, অ্যাড. তোফাজ্জল, অ্যাড. মনিরা চৌধুরী, অ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেন খান, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম রিপন, অ্যাড. শাহরিয়ার, অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, অ্যাড. মাইনুল ইসলাম, অ্যাড. মাসুদ প্রধানিয়া, অ্যাড. চৌধুরী ইয়াছিন ইকরাম, অ্যাড. জসিম প্রধানিয়াসহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আ.ন.ম এহছানুল হক মিলন গ্রেফতারের খবরে পুরো জেলায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শহরময় সর্বমহলে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বলছে এটা অতি বাড়াবাড়ি ছিলো। আবার কেউ কেউ বলছে মিলনকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আদালতে হাজির হওয়ার সুযোগ প্রদান করার প্রয়োজন ছিলো।
মিলন এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ কচুয়া আসন থেকে নির্বাচন করার জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করতেই মূলত দেশে ফিরছিলেন। তবে তার এই আটকের মধ্যে দিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি কিংবা জয়-পরাজয়ে কি ভূমিকা রাখে তা নিশ্চিত হতে আগামি ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তার সমর্থক ও কর্মীদের।
- Home
- প্রথম পাতা
- চট্টগ্রামে আটকের পর সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলন কারাগারে
Post navigation

