শান্তির জন্য ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি জনগণের পাশে ছিল
…….শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক
স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেছেন, গত ৫ আগস্টের পর সাধারণ মানুষ যাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে সেজন্য বিএনপি ও সমমনা দলের নেতৃবৃন্দ কাজ করেছে। সেখানে হিন্দু-খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষের পাশেই আমরা ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন- অনুপ্রবেশকারীদের আমাদের দলে কোন স্থান নেই। তাই এ প্রসঙ্গে আমার কোন আর বক্তব্যও নেই।
গত শনিবার দিবাগত রাতে জেলা বিএনপির সভাপতির বাসভবন মনিরা ভবনে স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক, জাতীয় দৈনিক এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কেউ যদি গুজব ছড়ায় এটির বিষয়ে আপনারাই (সাংবাদিকরা) লিখবেন। কারণ আপনাদের কাছে জনগণের এটিই প্রত্যাশা। আপনাদের কাছে অনুরোধ- সত্য কথা লিখবেন। আপনাদের মধ্যে যারা এই গুজব ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার বিধিমত ব্যবস্থা নিবেন। বর্তমানে সবচাইতে সতর্ক থাকার বিষয়ে হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউবসহ নানাভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো কারা করছে আমরা কিছুই জানি না।
তিনি বলেন, আমরা কাছে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফোন দিয়েছেন, তার কাছে ফোন দিয়ে টাকা চায়। তিনি আমার কাছে ওই নম্বর দেয়ার পর ওই ব্যাক্তিকে ফোন দিয়ে বলেছি আমি ওই অফিসের পিয়ন আপনার জন্য কিছু টাকা নিয়ে আসবো। এক পর্যায়ে সে বলে সে টাকা চায়নি। প্রকৌশলী তার পূর্বপরিচিত। পরে আমি এই নম্বর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়েছি, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য।
চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছু বিপদগামী লোক শিল্পকলা একাডেমিতে ভাংচুর করেছে। যারা এটির দায়িত্বে আছেন, তাদের উচিত ছিলো এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা। একমাস অতিবাহিত হলেও তারা কোন মামলা করেননি। মামলা করলেই তারা আমাদের এবং সাংবাদিকদের কাছে আসতো।
দখল বিষয়ে তিনি বিএনপি ও সমমনা দলকে ইঙ্গিত প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের মত বিএনপি এবং সমমনা দলকে ইঙ্গিত করেছে তারা। কারা জায়গা দখল করছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিকভার করছে। আমি বলবো আপনারা কাল থেকেই সত্য তথ্য তুলে ধরেন। আমাদের কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।
বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারাই বলেন চাঁদপুরে কোথায় বালু উত্তোলন হচ্ছে। বালু উত্তোলন হচ্ছে মুন্সিগঞ্জে। আমাদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেলিমুস সালামের পৈত্রিক সম্পত্তিতে বালু উত্তোলন হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা হয়েছে। আপনারা সেখানে যান। আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে। কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ ইতোমধ্যে ৩৩ জনকে আটক করেছে এবং একাধিকবারে ৩০-৪০টি বাল্কডেহ ও ড্রেজার জব্দ করেছে।
কিশোর গ্যাং সম্পর্কে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, কিশোর গ্যাং সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র বিএনপির কাজ না। এটির জন্য প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা লাগবে। আমরা একটা সময় কাজ করেছি। এখন আর মাঠে গিয়ে কিশোর গ্যাং ধরা সম্ভব না। এটি প্রশাসনেরই আন্তরিক হয়ে করতে হবে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা লাগবে। আমরা চাই প্রশাসন ও সাংবাদিকরা মুক্তভাবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি সেজন্য কাজ করতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে সেই দায়িত্ব আমরা নিব। আমাদের সমমনা কোন দল যদি এ ধরনের কাজ করে তাদের সাথে আমরা যোগাযোগ করবো, আশা করি তারাও দায়-দায়িত্ব নিবে।
শেখ মানিক বলেন, যে শক্তির জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে, বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি সে শক্তি যাদি আবারও মাঠে আসে, আমরাও মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত। আমরা কিন্তু আর ছাড় দিব না। আমরা চাই এই অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করুক। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন- তাদের একটা সময় দেয়া হবে। একটি নির্বাচনের জন্য যতটুকু সময় দেয়া প্রয়োজন। তাদের কোন সাংবিধানিক অধিকার নেই অন্য কোন কাজ করবে।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আজকের মতবিনিময় যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন একইভাবে আপনারা যখন প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করেন। তখন আপনাদের মনের কথাগুলো তুলে ধরেন। আশা করি এসব সমস্যার কথাও তুলে ধরবেন। তারা যেন এসব কাজে এগিয়ে আসে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে কোড়ালিয়ায় একটি ঘটনা হয়েছে। যেটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তারা জোরপূর্বক থানায় মামলা করেছে। কিন্তু পত্রিকার প্রতিবেদনে আসল সত্য বেরিয়ে এসেছে। ইভটিজিং কিংবা এই ধরনের কোন ঘটনা হয়নি। তারা থানায় প্রবেশ করে পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করেছে। ছোট ছোট ছাত্রদের কে এই ঘটনায় যুক্ত করেছে? এর আড়ালে কে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাকে বের করতে হবে। কারণ আমাদের কাছে তথ্য আছে ওই ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৯৯ ভাগ ছিলো ছাত্রলীগের কর্মী।
তিনি দলীয় নেতাদের বিষয়ে ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, আপনারা হয়তো জানেন না কারা বহিষ্কার হয়েছে। তাদের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে আমরা প্রকাশ করেনি। যারা ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে চাঁদাবাজি করেছে, লোকজনের গরু ও ছাগল এনে খেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতদিন আমরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছি। এখন আমাদের দলের মধ্যে যারা আছে, তবে সংখ্যা খুবই কম, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে- এটি আপনাদের উপলব্ধি করতে হবে।
মানিক বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এর সাথে সাধারণ অনেক মানুষ জড়িত। আপনারা জানেন তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স। আমাকেও শোকজ করা হয়েছে। তার ব্যাখ্যা আমি দিয়েছি। কেন্দ্রিয়ভাবে তা যাচাই বাছাই হয়েছে। কেন্দ্র থেকে আমাকে নিয়মতান্ত্রিক কথা বলেছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে আবারও বলতে চাই- যারা অসাধু সাংবাদিকতা করে, তাদের বিষয়ে আপনারা সবাই সোচ্চার থাকেন। আমাদের আপনাদের পাশে পাবেন। মূলত সাংবাদিকদের কোন দল থাকা উচিৎ না। সাংবাদিকদের একটিই দল, তা হচ্ছে গঠনমূলক সমালোচনা এবং সত্য কথা তুলে ধরা। একই সাথে আপনারা সমাজের কোথায় কোন সমস্যা আছে তা তুলে ধরেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সলিম উল্লাহ সেলিমের পরিচালনায় জেলার চলমান সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, দৈনিক চাঁদপুর দিগন্তের সম্পাদক এবং প্রকাশক অ্যাড. মো. শাহজাহান মিয়া, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, গিয়াস উদ্দিন মিলন ও এএইচএম আহসান উল্যাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর ও আল-ইমরান শোভন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন লিটন, আলম পলাশ ও শওকত আলী, ফারুক আহমেদ, আব্দুল আউয়াল রুবেল, এম এ লতিফ, জাকির হোসেন, বোরহান উদ্দিন ডালিম, ইব্রাহিম রনি, এমআর ইসলাম বাবু, তালহা জুবায়ের, নজরুল ইসলাম আতিক, কেএম মাসুদ প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব আনোয়ার বাবলু, সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন খান বাবলু, খলিলুর রহমান গাজী, ডিএম শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির চৌধুরী, যুগ্ম-সম্পাদক সেলিমুস্ সালাম, পৌর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন মাঝি, সেক্রেটারী অ্যাড. হারুনুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজালাল মিশন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামছুজ্জামান মন্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হজরত আলী ঢালীসহ আরো অনেকে।
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।