চাঁদপুরে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তুতি সভা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে
…………….জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান

এস এম সোহেল
চাঁদপুর মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনকল্পে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলণ কক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটি একটি জাতীয় দিবস। সরকারি কর্মসূচির সাথে মিল রেখে আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচি পালন করবো। এ দিবসে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদপুরের বই মেলা মানসম্মত করা হবে। সবাইকে এ দিবসে অংশগ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি নিয়ে কালারফুল লিপলেট তৈরি করা হবে। তিনি স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও সংবাদ প্রকাশ করার আহ্বান জানান। এই অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, পুষ্পস্তবক অর্পণকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না হয় সেদিকে আমাদের সবার দৃষ্টি রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর শহরের সম্প্রতির বন্ধন অনেক শক্ত। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আমি আশা করবো এই সম্প্রীতি সবাই ধরে রাখবেন। চাঁদপুর শহর শিল্প-সংস্কৃতিতে অনেক এগিয়েছে। সেদিকে দৃষ্টি রেখে চাঁদপুরে একুশ উদ্যাপন করা হবে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবছর একুশ উদ্যাপন আরোও সুন্দর হবে। সেজন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
সভার শুরুতেই বিগত বছরের সিদ্ধান্তসমূহ পাঠ করেন চাঁদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান।
সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মাহাবুবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, জেলা শিক্ষা অফিসার সফিউদ্দিন, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, অ্যাড. সাইফ উদ্দিন বাবু, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহ প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস এম আজিম উদ্দিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলহাজ অ্যাড. শেখ জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ অ্যাড. মো. শাহাদাত হোসেন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মুজিবর রহমান, এনএসআই’র উপ-পরিচালক এবিএম ফারুক হোসেন, পাসপোর্ট অফিসার তাজ বিল্লাহ, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ, তথ্য অফিসার মোহাম্মদ নূরুল হকসহ সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে- মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আগমি ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি মোট ৬ দিন সন্ধ্যায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বই মেলার আয়োজন করা হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় শহীদ মিনারে কবিতা আবৃত্তি ও নাটিকা মঞ্চায়ন হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনার ব্যাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সকল দৈনিক পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার উদ্যোগে শহরের নতুন বাজার সড়ক, অঙ্গীকার পাদদেশ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর, শপথ চত্বর, ইলিশ চত্বর, চিত্রলেখা মোড়, নতুন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সড়কে বাংলা বর্ণমালা ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি সব স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতিসহ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দিবসের প্রত্যুষে শহীদ দিবসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সঙ্গীত পরিবেশন সহকারে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রভাতফেরী। ঐ দিন শহীদের স্মরণে জেলার সব স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবনে সঠিক নিয়মে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করতে হবে। সব স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পাঠ, স্বরচিত ছড়া ও কবিতা প্রতিযোগিতা এবং কলেজে সর্বসাধারণের জন্য ২১ সংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জেলার সব মসজিদে বাদ জোহর এবং মন্দির, গীর্জায় শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা দোয়া কামনা করতে হবে। বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চিত্রাংকন, সঙ্গীত, আবৃত্তি ও সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের উপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা এবয় ভাষা শহীদের অমর স্মৃতির উদ্দেশে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। রাত ৮টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে।