চাঁদপুরে রিংজাল দিয়ে দেশীয় মাছ নিধন অব্যাহত

সজীব খান

চাঁদপুরের গ্রামাঞ্চলের নদ-নদী ও খালে অবৈধভাবে রিংজাল দিয়ে দেশীয় জাতের ছোট বড় সব প্রকার মাছ নিধন অব্যাহত রয়েছে। সারা বছর জেলেরা নদ-নদীতে রিংজাল দিয়ে দেশীয় মাছ নিধন করলেও বর্ষার সময় তারা গ্রামাঞ্চলের খালে-বিলে রিংজাল দিয়ে দেশীয় মাছ নিধনের উৎসবে মেতে উঠে। রিংজাল দিয়ে মাছ নিধন সরকারের পক্ষ থেকে জোড়ালোভাবে নিষিদ্ধ করেছে। মৎস্য অফিস থেকেও রিংজাল দিয়ে মাছ নিধন না করার জন্য জেলেদের বলা হয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা, জেলেরা নিজেদের ইচ্ছে মত চায়না চাই দিয়ে অবাধে মাছ নিধন করে যাচ্ছে। নিষিদ্ধ এ জালের অবাধ বিচরণের ফলে দিন দিন দেশ থেকে দেশীয় মাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

রিংজাল, যা চায়না চাই নামে পরিচিত রয়েছে। চায়না থেকে মেশিন এনে বাংলাদেশের চায়না চাই তৈরি করা হচ্ছে। যা মুন্সীগঞ্জ এলাকায় এ চাই তৈরি হয় বলে জানা গেছে।

সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, যেসব জেলেরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেলে কার্ডধারী হিসেবে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা নিচ্ছে তারাই নিষিদ্ধ এ রিংজাল ি য়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। আর অভয়াশ্রমের সময় তারাই আবার প্রণোদনা পাচ্ছে, এর দায় নিবে কে? সরকার তো জেলেদের অবৈধভাবে মাছ নিধন না করার জন্য বলে দিয়েছে। প্রশাসন থেকেও বলা হচ্ছে। কিন্তু এতোভাবে বলার পরও তারা কেমন করে নদ-নদী, খালে-বিলে দেশীয় মাছ নিধন করছে। মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ থাকার পরও নদ-নদীতে রিংজালের অবাধ বিচরণ রয়েছে।

ডাকাতিয়া নদীর পাশের ইউনিয়নগুলোর জেলেরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেশীয় মাছ নিধন করছে। শাহমাহমুদপুর, রামপুর, মৈশাদী, বাগাদীসহ আশপাশের ইউনিয়নে জেলেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এক-একজন জেলে একাধিক রিংজাল দিয়ে নদীতে দেশীয় মাছ নিধন করছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। মৎস্য বিভাগের জোড়ালোভাবে অভিযান অব্যাহত রাখা এবং রিংজাল দিয়ে মাছ নিধন না করার জন্য জেলেদের সাথে সভা করার দাবি উঠেছে।

একধিক জেলের সাথে কথা হলে তারা জানান, একটি রংজাল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এ জাল নদী, খালে বা বিলে পাতলে সহজেই দেশীয় মাছ নিধন সম্ভব হয়। রিংজালের ভেতরে যা ঢুকবে তা’ আর বের হওয়ার সুযোগ নেই। একটা রিংচাই কিনলে কয়েক বছর যায় এবং জেলেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়। যারা চায়না এ চাই দিয়ে তাদের ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দৈনিক আয় হয়।

সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে বলেন, কারা-কারা রিংজাল দিয়ে মাছ নিধন করছে তা’ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানেন, তারা যদি তাদের তালিকা করা জেলেদের কড়াভাবে বলে তাহলে তারা চায়না চাই পাতা বন্ধ করে দিবে। কিন্তু ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ভোটের রাজনীতি করায় দেখেও না দেখার ভান করে জেলেদের চায়না চাই দিয়ে মাছ নিধন সুযোগ করে দিচ্ছে।

চাঁদপুর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য জানান, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। যেসব ইউনিয়নের জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যদি সতর্ক না হলে তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৮ আগস্ট, ২০২১।