চাঁদপুরে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে চিকিৎসকদের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার
মোবাইল ফোনে কল করে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করে চাঁদপুরে কর্মরত সরকারি চিকিৎসকদের একের পর এক হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করছে চাঁদপুর শহর ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকদের মাঝে।
জানা যায়, গত ক’দিনে চাঁদপুরের হাইমচর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ, কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) সহ সরকারি অন্তত ৩০ জন চিকিৎসককে সর্বহারা পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করে যাচ্ছেন। চাঁদার টাকা না দেয়া হলে চিকিৎসকদের হত্যা করার হুমকি দেয়া হয়। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, হাইমচর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএইচএফপিও ডা. মামুন রায়হানকে গত ৭ নভেম্বর দুপুর ১টা ৫৫ মিনিট থেকে ২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ০১৮১৪৫৭২৮৯০ নম্বর থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করে নিজেকে সর্বহারা পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিকে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এরপরই একই হাসপাতালের ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডা. রাশেদ মোহাম্মদ, ডা. অদিতি বিশ্বাস, ডা. নাজমা আহমেদকেও একই নম্বর থেকে ফোন দিয়ে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাদেরও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। পরবর্তীতে গত ৯ নভেম্বর হাইমচর থানায় তারা একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
এদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ চিশতি জানান, গত ৫ নভেম্বর আমাকে ফোন দিয়ে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে। এসময় তারা বলেন, তাদের সর্বহারা পার্টির অনেক লোকজন আহত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। তাই তাদের টাকা চাঁদা দিতে হবে, নয়তো আমাকে হত্যা করা হবে। পরবর্তীতে গত ৭ নভেম্বর আবারো আমার অফিসে ফোন দেয়া হয়। এসময় আমার আরো অন্ততপক্ষে ১০ জন সহকর্মীর কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাদেরও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পরে গত শনিবার হাজীগঞ্জ থানায় আমরা দু’টি সাধারণ ডায়রি করি।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, গত কয়েকদিনে সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে আমাদের হাজীগঞ্জ, হাইমচর, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। চাঁদা না দেওয়া হলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এসমন ঘটনায় আমাদের অনেক চিকিৎসক অত্যন্ত ঘাবড়ে গেছেন। অনেকেই বদলির জন্য আমার কাছে সুপারিশ করেন। বিষয়টি আমি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরসহ পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমানকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। পুলিশ আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার বলেন, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। পাশাপাশি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। চিকিৎসকদের অফিস ও বাসবভনে পুলিশের টহল আগের চেয়ে আরো বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
১৫ নভেম্বর, ২০২০।