স্টাফ রিপোর্টার
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), বিভাগীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় উপজেলা চেয়ারম্যানদের এক হাত নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান। এসময় গাড়ি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানরা জেলার বাইরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি জব্দ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। গত সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে এসডিজির প্রথম সভায় তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন কর্মকা- ও ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
এসডিজি’র ওই সভায় কমিটির সদস্য হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক, অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা প্রশাসকসহ চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামি ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত অভিষ্টসমূহ ও ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বর্তমান অবস্থা এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার একপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের প্রসঙ্গে কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার।
তিনি বলেন, আমাদের যাপিত জীবনের প্রতিটি স্তর, প্রতিটি পদক্ষেপ এসডিজি’র অন্তর্ভুক্ত। তাই এসডিজি বাস্তবায়নে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দায়িত্বপালন জরুরি। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন বিভাগীয় কমিশনার।
বলেন, আমি লক্ষ্য করছি বেশিরভাগ উপজেলা চেয়ারম্যান শপথ ভঙ্গ করছেন, দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে যাচ্ছেন। মুজিবকোর্ট পরে, সরকারের দেয়া গাড়িতে চড়ে এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়ানো, মাতবরি করা তাদের কাজ নয়। অথচ প্রতিনিয়ত তাই করছেন অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান।
বিভাগীয় কমিশনার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আপনারা সরকারি গাড়ি হাঁকিয়ে দাপিয়ে যাচ্ছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে ঢাকা চলে যাচ্ছেন। এসব আর হতে দেয়া যাবে না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান গাড়ি নিয়ে জেলার বাইরে যেতে পারবেন না, গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি জেলা প্রশাসকদের বলে দিতে চাই, অনুমতি ছাড়া কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান গাড়ি নিয়ে জেলার বাইরে গেলে গাড়ি জব্দ করবেন। জেলা প্রশাসকরা না পারলে এই কাজ আমি করবো।
জেলা প্রশাসকদের এই ক্ষমতা দেয়া আছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, আপনারা শপথ নিয়েছেন জনগণের সেবক এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে কাজ করার জন্য। গতকালও আমি একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে আমার দপ্তরে শপথ পড়িয়েছি। প্রত্যেকটা উপজেলা চেয়ারম্যানকে শপথের পর আমি দায়িত্ব সম্পর্কে সাবধান ও সচেতন করে দিই। বলি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও তাদের মুখে হাসি ফোটাতে প্রধানমন্ত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন। আপনাদেরকে চেয়ারম্যান বানিয়ে গাড়ি, বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর মতো স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু শপথ গ্রহণের পর অনেকেই সরকারি দায়িত্ব পালনের চেয়ে নিজেদের আত্মপ্রচার, আত্মোন্নয়নে ব্যস্ত থাকেন। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যানদের কর্তব্য-কর্ম সম্পর্কে আরও বেশি মনোযোগী ও সরকারের লক্ষ্য ও এসডিজি বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিভাগের ৯৯টি উপজেলার চেয়ারম্যান স্ব-স্ব জেলা প্রশাসক এবং প্রত্যেকে আবার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জবাবদিহি করার বিধান রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান বা স্থানীয় সরকারের কোনো জনপ্রতিনিধিদের কর্মকা-ে অসন্তুষ্ট হলে বিভাগীয় কমিশনার উচ্চপর্যায়ে চিঠি দিয়ে ওই জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। উপজেলা চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হওয়ার পর বিভাগীয় কমিশনার তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। তাদের ছুটি মঞ্জুর করেন বিভাগীয় কমিশনার।