রুহুল আমিন খান স্বপন
ফরিদগঞ্জে কচুরিপানা ছবিটি দেখলেই মনে হবে চোখে চোখ জুড়ানো একটি সবুজ দৃশ্য। নদীর মধ্যে কচুরিপানার উপরের সবুজাভ দৃশ্যটি ভাল লাগলেও এর ভিতরের দৃশ্যটি ভাল লাগার মতো নয়। কচুরিপানা জট পুরো ডাকাতিয়া নদীকে ঘিরে ফেলার সাথে সাথে নষ্ট হয়ে গেছে নদীর পানি।
কোথাও কোথাও কচুরিপানার এই জট এমন অবস্থা হয়েছে যে, অনায়াসে এর উপর দিয়ে হেটে নদীর এপার থেকে ওপারে যাওয়া যায়। এর উপর জন্মেছে পরগাছা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে নষ্ট ও দূষিত পানি হওয়ার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো মরে যাচ্ছে।
সরকার প্রতি বছর দেশীয় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদীসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে লাখ লাখ টাকার মাছের পোনা অবমুক্ত করে। তাছাড়া এই নদীর উপর ফরিদগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার জেলে পরিবার নির্ভরশীল। কিন্তু কচুরিপানার এই ভয়াবহ জটের কারণে তা ভেস্তে যেতে পড়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতে এই সমস্যাটি প্রতিবছরই হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কচুরিপানা দূরীকরণে নামেমাত্র বরাদ্দ প্রদান করে। নদীর প্রায় ৬০ কিলোমিটার এক অংশ পরিস্কার করা সম্ভব নয়। এছাড়া কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে ক’বছর আগে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও তা থেমে গেছে।
স্কুল শিক্ষক ইব্রাহীম খলিল বলেন, কচুরিপানার জট নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের বাছে বারংবার বলেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি। চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের অন্যতম যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যম ছিল এ ডাকাতিয়া নদী। সেই কালের আবর্তে তা আজ শুধুই কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এক সময়ের প্রমত্তা ডাকাতিয়া শুধু বাঁধ দিয়েই তার মৃতপ্রায় করা হয়নি। ক্রমশ দখল, নোংরা আবর্জনা ফেলা, সুয়ারেজসহ হাট বাজার গুলোর ড্রেনের পানির শেষ ঠিকানা ডাকাতিয়া হওয়ায় তাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়েছে। ফলে সবুজ কচুরিপানায় বিবর্ণ এখন ডাকাতিয়া নদী।
প্রকল্প তৈরিকারী প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলাম জানান, ড্রেজিং করে ডাকাতিয়ার নব্যতা ফিরিয়ে নিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাঁধাই করা এবং দুই পাড়ে সড়ক ও সৃজনকৃত বনায়ন করার জন্য প্রস্তাবনা ছিল। সরকার প্রকল্পটি গ্রহণ করে ধাপে ধাপে এর বাস্তবায়ন করলে শুধু ডাকাতিয়া নদী কিছুটা হলেও তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে।