ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো
প্রায় দুই যুগ ধরে ফরিদগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চল রুটে যাত্রী পরিবাহন করে আসছিল শাহী ও জোনাকি বাস। গাড়ি প্রতি ৬০ টাকা চাঁদা দিয়েই চলাচল করে আসছে এই যানবাহনগুলো। প্রতিদিন ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে রাত ৩টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু করে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সূচি অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে যেতো শাহী ও জোনাকি বাসগুলো। সম্প্রতি চাঁদপুর শ্রমিক-মালিক সমিতির ইউনিয়নের লোকজন অতিরিক্ত আরো ১২০ টাকা চাঁদা দাবি করলে এই দুই বাস মালিক এই রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ফরিদগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীরা।
জানা যায়, এই রুটে গাড়ি চলতে হলে আগে ইজারাদারকে ২০ ও পার্কিং বাবদ ৪০ টাকা দিতেন গাড়ির মালিক পক্ষ। সপ্তাহখানেক আগে শ্রমিক-মালিক সমিতির ইউনিয়নের লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্কিং ইজারাদার ২০, লাইনম্যান ২০, উপজেলা মালিক সমিতি ২০, উপজেলা শ্রমিক কমিনিউটি ২০, জেলা মালিক সমিতি ৩০, জেলা শ্রমিক কমিনিউটি ৩০ ও পার্কিং বাবদ ৪০ টাকাসহ মোট ১৮০ টাকা দিতে হবে। এই চাঁদা দিতে না পেরে শাহী ও জোনাকি বাস কর্তৃপক্ষ এই রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
শাহী বাস মালিক রায়হান আহমেদ জানান, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হঠাৎ করেই অতিরিক্ত চাঁদা দাবি করেন। সে কারণে আমরা এ রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে এ রুটে আামাদের গাড়ি চলাচল করে আসছিল। প্রতিনিয়তই আমরা লোকসান দিয়ে আসলেও যাত্রীদের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে ফরিদগঞ্জের যাত্রীদের সেবা প্রদান করেছি। হঠাৎ আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ ছাড়াই বাড়তি ১২০ টাকা চাঁদা দাবি করে করা হচ্ছে- বিভিন্ন সংগঠনের নামে। যা মোটেই কাম্য নয়। অতিরিক্ত চাঁদা দিয়ে আমরা এ রুটে ব্যবসা করবো না। চাঁদার বিষয়টি সমাধান হলে আমরা এই রুটে গাড়ি চালাবো।
এদিকে চট্টগ্রামগামী যাত্রী সরকারি কর্মচারী ইকবাল হোসেন, ব্যবসায়ী আবুল কালাম, শিক্ষার্থী বিলকিছসহ আরো অনেকেই বলেন, ফরিদগঞ্জ থেকে ভোররাতে ও সকালে শাহী বা জোনাকি বাসে করে চট্টগ্রাম যেতাম। হঠাৎ করে বাসগুলো চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা মনে করছি হয়রানীর শিকার হচ্ছি। আমদের এখন প্রথমে রায়পুর যাওয়া লাগবে, পরে সেখান থেকে চট্টগ্রামের গাড়ির জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে যাতায়াত করতে হবে। এতে যেমনিভাবে আমাদের বাড়তি টাকা খরচ হবে, তেমনিভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
নবীর হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, সংগঠন হয় মানুষের সুযোগ-সুবিধার জন্য। কিন্তু সংগঠনের কারণে যদি মানুষকেই হয়রানি হতে হয়, তাহলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ কোথায়?
চাঁদপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাবুল মিজি বলেন, শাহী ও জোনাকি বাস চাঁদপুর ডিসি আইটি কমিনিউটির আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন গাড়ি চালিয়েছে। ফরিদগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম এই গাড়ি চলাচলের অনুমোদন নাই। পরিবহনের নিতিমালা অনুযায়ী এই রুটের পারমিট ও জেলা মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের অনুমতি লাগবে। কিন্তু শাহী ও জোনাকী বাস তা নেয়নি। তাই আমরা বলেছি এই রুটে গাড়ি চালাতে হলে তারা যেন নিয়ম অনুযায়ী রুট পারমিট নিয়ে গাড়ি চালায়। চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রুট ব্যবহার করলে এইসব চাঁদা দেওয়া লাগে, এটাই নিয়ম।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে এ বিষয়ে জেনেছি। চাঁদা দাবি ও অপরাধমূলক কোন প্রকারের অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
০৩ জুলাই, ২০২৪।