স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর মিরপুরে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার নামে দেওয়া শিল্প প্লটের বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই পাঁচ নেতা হলেন- মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আমির হোসেন আমু, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সুকুমার রঞ্জন ঘোষ।
বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ করা এই ৫ শিল্প প্লটের কিস্তির সব টাকা বুঝে পেয়ে এই পাঁচজনের কাছে দখল হস্তান্তর ও রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (জাগৃক)। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁদের শিল্প প্লটগুলো বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এই ৫ নেতার নামে থাকা প্লটের ফাইলগুলো পর্যালোচনা করে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে ইতোমধ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জাগৃক। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে তা বাতিল হবে। তবে এ বিষয়ে জাগৃকের কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মিরপুরে শি-১ /এ ৫ শিল্প প্লটটি বরাদ্দ পান। সেখানে জমির পরিমাণ ১১ দশমিক ৬৬ কাঠা। একই এলাকায় একই আয়তনের একটি শিল্প প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তাঁর প্লটটিও সরকারের নির্ধারিত কিস্তির টাকা পরিশোধের পর রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুকে মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ২৫ নম্বর রোডের আই/১ নম্বর শিল্প প্লটটি বরাদ্দ দেয় জাগৃক। পরে তা পরিবর্তন করে রূপনগর (প্রথম পর্ব) বিসিএস ইকোনমিক একাডেমির পশ্চিম পাশে পি ১ /এ ৬ নম্বর শিল্প প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালে বাস্তব দখল হস্তান্তর এবং রেজিস্ট্রিকৃত ইজারা দলিল সম্পাদন করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের অ্যাভিনিউ-৩-এর ৩ / ১ নম্বর রোডের শিল্প প্লট নম্বর-শি-১ /এ-৪ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই প্লটে জমির পরিমাণ ৭৫৫ দশমিক ৭৭ বর্গগজ। ২০০১ সালে মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের আই/৮ নম্বর শিল্প প্লটটি দি রেইনবো প্যাকেজেস অ্যান্ড প্রিন্টার্সের মালিক সাহান আরা বেগমের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে কর্তৃপক্ষের ১৫৩তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ এ প্লটের পরিবর্তে রূপনগর (প্রথম পর্ব) শিল্প প্লট নম্বর-শি-১ /এ-৪ বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেখানে জমির পরিমাণ ৭৫৫ দশমিক ৭৭ বর্গগজ। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর দায়মুক্তি ছাড়পত্র দিয়ে তা রেজিস্ট্রিকৃত ইজারা দলিল সম্পাদন করে দেয় জাগৃক।
নথি থেকে জানা যায়, দশম সংসদের মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষকে ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল মিরপুরের রূপনগরে (প্রথম পর্ব) ৭২২ দশমিক ২২ বর্গগজের শিল্প প্লট নম্বর শি-১ /এ-৩ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে আমমোক্তারনামা নিয়ে এসএইচএস সোয়েটার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ওই প্লটের মূল্য কিস্তিতে পরিশোধের আবেদন করেন। প্লটটি বর্তমানে তাঁদের দখলে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার নামে থাকা শিল্প প্লট বাতিলের উদ্যোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে জাগৃকের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) আব্দুল কুদ্দুস সরকারের দপ্তরে গেলে তিনি সব শুনে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। বক্তব্য জানতে পরে জাগৃকের চেয়ারম্যান মো. হামিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।