হাইমচরে কৃষি জমির মাঝে ব্রিজ আছে, রাস্তা নেই

নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের পাথর ব্যবহার

স্টাফ রিপোর্টার
হাইমচর উপজেলা দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড কৃষ্ণপুর খালে কৃষি জমির মাঝে রাস্তাবিহীন ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২৫ লাখ টাকা বাজেটে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা যায়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদার নদীর পাড়ে কৃষি জমির মাঝে রাস্তা ছাড়া একটি ব্রিজ নির্মাণ করায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ দুলাল পাটোয়ারী হাডু এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্সের নামে ব্রিজটি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি পায়। পরে নয়ানি লক্ষ্মীপুর গ্রামের মজিবুর রহমান পাটোয়ারী ও নুরুল হক মাস্টার যৌথভাবে সেই ব্রিজের কাজটি ঠিকাদারের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়ে তারা নিজেরাই কাজটি করাচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী হাফেজ, শহীদ ও মফিজ জানায়, জনবহুল রাস্তায় ব্রিজ না করে মেঘনা নদীর পাড়ে বিলের মাঝখানে ঠিকাদারের স্বার্থ হাসিল করতে ব্রিজটি করার আগে ইউনিয়নের শত শত জেলে বাধা দিয়ে কাজটি না করার জন্য হাইমচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আনিসুর রহমানকে বলা হয়। এলাকাবাসীর বাঁধা উপেক্ষা করে ঠিকাদার চলাচলের রাস্তায় ব্রিজটি না করে কৃষি জমির মাঝে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। ছোট একটি খালের উপর দিয়ে ব্রিজটি করলেও দুই পাশে কোন রাস্তা নেই, রয়েছে কৃষি জমি, পাশেই আছে ডাকাতিয়া নদী। এই এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ লোক মৎস্যজীবী। এই কৃষ্ণপুর খাল দিয়ে শত শত ছেলে নৌকা আসা-যাওয়া করে।
আরো জানায়, ব্রিজটি যে উচ্চতা করা হচ্ছে বর্ষার সময় এখান দিয়ে কোন নৌকা চলাচল করতে পারবে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়বে জেলেরা। এ কারণে ব্রিজটি আরো দুই ফুট উঁচু করার জন্য এখানকার জেলেরা জোর দাবি জানায়।
এছাড়া এই ব্রিজটি নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। সিডিউল মোতাবেক যে পরিমাণ রড দেয়ার কথা ছিল তার চেয়ে কম রড ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া বোল্ডার ভাঙা পাথর ব্যবহার না করে নিম্নমানের ভুতু ভাঙা গুঁড়া পাথর ও সিলেকশন বালু না দিয়ে আস্তর বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
সিডিউল অনুযায়ী ব্রিজ নির্মাণে বোল্ডার পাথর ও সিলেকশন বালু ব্যবহার করতে হবে। নিম্নমানের পাথর দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। তাছাড়া ব্রিজ করার পূর্বে নিচে পাইলিং করা হয়নি। মেঘনা নদীর পাড়ে নির্মিত এই ব্রিজটি প্রবল স্রােতে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। জেলেদের দাবি উপেক্ষা করে রাস্তা বিহীন এই ব্রিজটি করায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি নুরুল হক মাস্টার জানায়, বাজারে যে পাথর পাওয়া যাচ্ছে সেই পাথর দিয়েই কাজ করানো হচ্ছে। নির্মাণের পাথর দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কিনা এতো প্রশ্নের জবাব আপনাদের দেবো কেন? কিছু জানতে হলে অফিসের সাথে যোগাযোগ করেন।
হাইমচর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) আনিসুর রহমান জানান, রাস্তা ছাড়া কৃষি জমির মাঝে ব্রিজটি তৈরি করার আগে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জেলে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল। চেয়ারম্যান নতুন একটি রাস্তা করে দেবার কথা বলার পরেই ব্রিজের কাজ শুরু হয়।