পুলিশের অভিযান অব্যাহত আশিকাটিতে বন্ধ হয়নি মাদক কারবারীদের দৌরাত্ম্য

আশিকাটি ইউনিয়নের মাদক বিক্রেতা মুসলিম ঢালী ও সোলেমান গাজী। -ইল্শেপাড়

চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের চাঁদখাঁর দোকান, পূর্ব হোসেনপুর, পশ্চিম হোসেনপুর, বাবুরহাট, মুন্সিহাটের একাংশ, রালদিয়াসহ আরো এলাকায় এখনো মাদক কারবারীদের দৌরাত্ম্য কমেনি। দৈনিক ইল্শেপাড়ে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ গত এক সপ্তাহে একাধিকবার অভিযান করে। কিন্তু এখনো ওই ইউনিয়নের মাদক বিক্রেতা ও নেপথ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের অর্থ যোগানদাতা ও প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নিজিদের অপরাধ থেকে আড়াল করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা-তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এলাকায় অপপ্রচারও করছে।

প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্রটি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারণে বিগত দিনে প্রশাসনের নজরে আসেনি। ২০ থেকে ২৫ জনের ওই চক্রটির কথানুযায়ী মাদক বিক্রি ও বিক্রির টাকার ভাগ না দিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে হয়েছে খুচরা মাদক বিক্রেতাদের। মাদক কারবারীদের কারণে এলাকার যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং অপরাধমূলক কর্মকাÐ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আশিকাটি ইউনিয়নের উল্লেখিত গ্রামগুলো অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন মডেল থানার ওসি মো. নাসিম উদ্দিন। পুলিশ মাদক বিক্রেতাদের বাড়ি-বাড়ি যান এবং তাদের অভিভাবকদের সতর্ক করে দেন। পুলিশ একাধিকবার অভিযান করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। পুলিশের অভিযানের টের পেয়ে মাদক বিক্রির সাথে জড়িত উল্লেখিতরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

সম্প্রতি আশিকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবাসী নজরুল ইসলাম সুমন এক মাদক বিক্রেতার স্বীকারোক্তি নিলে বেরিয়ে আসে মাদকের সাথে জড়িতদের নাম ও মাদক বিক্রির বর্তমান হালচিত্র। মাদকের সাথে জড়িত সেবনকারী ও বিক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ আটক হলেও ছাড়া পেয়ে পুনরায় একই কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। বিক্রেতাদের অর্থ যোগান ও প্রশাসনের সাথে বুঝাপড়া করবেন মর্মে নেপথ্যে কাজ করছেন বিভিন্ন পরিচয়দানকারী প্রভাবশালী চক্র। তারাই বিক্রেতাদের অর্থ যোগান দেন এবং লাভের অংশ নিয়ে যান। চাঞ্চল্যকর এই তথ্য প্রদান করেন ওই ইউনিয়নের ইয়াবা বিক্রেতাদের অন্যতম হোসেনপুর গ্রামের ছাত্তার ঢালীর ছেলে মুসলিম ঢালী। কিন্তু এখন পর্যন্ত মুসলিম ঢালী আটক হয়নি।

মুসলিম ঢালী স্বীকারোক্তিতে বলেন, সে মাদক বিক্রি ছাড়া অন্য কোন কাজ করে না। তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে প্রতিমাসে ২-৩ হাজার টাকা খরচের জন্য পান। ইয়াবা সেবন ও জীবন ধারণের জন্য মাদক বিক্রির কাজ করেন তিনি। গত কয়েকমাস আগে সে প্রতিদিন কমপক্ষে ২শ’ থেকে ৩শ’ ইয়াবা বিক্রি করতেন। এখন বিক্রি কমেছে, প্রতিদিনি ৭০ থেকে ৮০ পিস ইয়াবা বিক্রি করেন।

মুসলিম আরো বলেন, তার এই কাজে প্রভাবশালীদের মধ্যে চাঁদখাঁর দোকান এলাকার মাহবুব গাজী, পূর্ব হোসেনপুর গ্রামের রাজিব ও সেলিম সার্বিক সহযোগিতা করেন। মাদক ক্রয় করার জন্য টাকার প্রয়োজন হলে রাজিব যোগান দেয়। অনেক সময় রাজিবের চাঁদখার দোকান অফিস থেকেই ইয়াবা সাপ্লাই দেয়া হয়। মাদকসহ প্রতারণা কাজে জড়িত অভিযোগে মামলার আসামি হয়েছেন রাজিব জানান মুসলিম।

মাদক বিক্রেতা সোলেমান গাজী, হামিম প্রধানিয়া ও প্রবাসী নজরুল ইসলামের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, মুসলিমসহ ওই ইউনিয়নের মাদক বিক্রেতারা শহরের ষোলঘর এলাকার চক্ষু হাসপাতালের বিপরীত এলাকার বাসিন্দা নয়নের কাছ থেকে তারা ইয়াবা কিনতেন। এখনো মাঝে-মাঝে কিনেন। তার কাছে না পেলে পুরাণবাজারের মিলন নামে আরেক মাদক কারবারীর কাছ থেকে কিনেন।

পুরো ইউনিয়নে মাদক বিক্রির সাথে জড়িতদের মধ্যে অন্যতম মুন্সির হাট বাজারের ফার্নিসার ব্যবসায়ী সুমন, রালদিয়া এলাকার শাহজাহান প্রধানিয়ার ছেলে হামিম প্রধানিয়া, পূর্ব হোসেপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সাজু মালের ছেলে মাহবুব মাল, চাঁদখাঁর দোকান এলাকার হেলাল, ডিস ব্যবসায়ী পাভেল, চা দোকানী মো. সাইফুল, বাবুরহাট এলাকার মামুন মাল, অপু মাল, শাহ আলম ডাক্তার, পশ্চিম হোসেনপুর মৃত আবিদ মালের ছেলে পগু মাল।

এলাকায় মাদক ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিবাদ ও স্বীকারোক্তি নেয়ার পর থেকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে আসছেন প্রভাবশালী ওই চক্রটি। তারা প্রবাসী নজরুল ইসলাম সুমনের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছেন।
এ ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী শামিমা নাহিন রুনা গত ১৫ জুন চাঁদপুর মডেল থানায় মাদক বিক্রেতা রাজিব মৃধা, মাহবুব গাজী, পগু মাল ও ইউসুফ পাটওয়ারী নামে সাধারণ ডায়রি করেছেন। ডায়রি নম্বর-৭৩৬। ডায়রির আলোকে মডেল থানার পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করেছেন এবং ঘটনার সতত্যাও পেয়েছেন বলে প্রবাসী নজরুল ইসলাম সুমন জানান।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন বলেন, গণঅভিযোগের ভিত্তিতে মডেল থানা পুলিশ গত এক সপ্তাহে ৩ বার অভিযান চালিয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা বাড়ি থেকে পালিয়েছে। সর্বশেষ ২০ জুন প্রত্যেক মাদক বিক্রেতার বাড়ি গিয়ে তাদের অভিভাবকদের হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে এবং থানায় উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। মাদক নির্মূল করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জুন ২০১৯