শাহ্ আলম খান
চাঁদপুরে শীতের সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও চাল ও তেলের দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। দফায় দফায় এই দু’টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে শহরের পালবাজার, বিপণীবাগ বাজার, নতুন বাজার, ওয়ারলেস বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায় চাল ও তেলের দামসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি।
পাল বাজারে চাল ব্যবসায়ী মতিন মোল্লার ও সেলিম শিকদার এবং আক্কাস আলী ঢালী বলেন, টানা দুই সপ্তাহ ধরে চাল ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার কারণে বাজারে ক্রেতা খুবই কম। ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, উত্তরবঙ্গের চালের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে চাঁদপুরে এর প্রভাব পড়েছে। চাল বেশিরভাগ আসে দিনাজপুর অঞ্চল থেকে। পাল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরাও দিয়েছেন একই তথ্য। গত এক সপ্তাহে পাইজাম ও গুটি বা মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। পাইজাম ও গুটি দাম বেড়ে ঠেকেছে ৫৫ টাকায়। এর আগের সপ্তাহে এই দুই ধরনের চালের দাম ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ৫৪ টাকা হয়েছিল। এছাড়া গত সপ্তাহে মোটা বা স্বর্ণা ও চায়না ইরি চালের দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ‘গরিবের চাল’ হিসেবে পরিচিত মোটা চালের দাম ১ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত ৪-৫ টাকা করে বেড়েছে। ৫২-৫৩ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের পাইজামের দাম বেড়ে ৫৫-৫৬ টাকা হয়েছে। নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৩-৬৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকার মধ্যে।
বিপণীবাগ বাজারের ব্যবসায়ী মামুন গাজী বলেন, কয়েক দিন ধরে চালের দাম বাড়তি। মোটা চাল বাজারে নেই বললেই চলে। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম সম্প্রতি দুই দফা বেড়েছে। মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন চিকন চালের দামও বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কতো দিন চলবে বলা মুশকিল।
একই বাজারের ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাজারে মোটা চাল নেই। এক মাসের বেশি হয়ে গেছে আমরা মোটা চাল পাচ্ছি না। সম্ভবত মোটা চালের সঙ্কটের কারণেই মাঝারি ও চিকন চালের দাম বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে যেভাবে চালের দাম বেড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সামনে আরও দাম বাড়তে পারে।
এদিকে চালের পাশাপাশি ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে তেলও। গত এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা হয়েছে, যা আগে ছিল ৯৮ থেকে ১০০ টাকা। ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে ৬১০-৬৩০ টাকা হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৯০-৫৫০ টাকা। বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে ১১০-১২০ টাকা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় নাম লিখিয়েছে খোলা ও সুপার পাম অয়েলও। বাজারে খোলা পাম অয়েলের দাম ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে ৯১-৯২ টাকা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে খোলা পাম অয়েলের দাম ছিল ৮৬-৯১ টাকা। সুপার পাম অয়েলের দাম ২ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৯৪-৯৬ টাকা হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯১-৯৪ টাকা।
এ বিষয়ে শহরের নাজির পাড়ার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, সবজির দামে এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু চাল ও তেলের দাম সেই স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। আগে সবজি কিনতে পকেটের সব টাকা খরচ হয়ে যেত, এখন চাল ও তেল কিনতে গেলে পকেট ফ টাকা হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের চাল ও তেলের বাজারে দ্রুত নজরদারি বাড়ানো উচিত।
তালতলা এলাকায় বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মাছ, মাংস, পোলাও খেতে চাই না। ভর্তা, সবজি দিয়ে পেট ভরে দু’মুঠো ভাত খেতে পারলেই খুশি। কিন্তু সবকিছুর যে দাম পেট ভরে ভাত খাওয়ার উপায় নেই। বাজারে এখন ৬০ টাকার নিচে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি খোলা সয়াবিন তেল কিনতে ১২০ টাকা লাগছে। চাল, তেলের এমন দামের কারণে আমাদের মতো গরিব মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে।
এইদিকে চাল ও তেলের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে আমদানি করা আদা, জিরা আর লবঙ্গেরও দাম বেড়েছে। আদার দাম ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৯০-১০০ টাকা হয়েছে। জিরার দাম ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে কেজি ৩০০-৪০০ টাকা হয়েছে। লবঙ্গের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এতে এই পণ্যটির কেজি ৮০০-১০০০ টাকা হয়েছে।
অপরদিকে শহরের মাছ বাজারগুলোতে পদ্মা-মেঘনা নদীসহ অন্যান্য জলাশয়ে দেশীয় মাছের আমদানি বেড়েছে। সন্ধ্যায় শহরের বিপনিবাগ বাজারে গিয়ে দেখাগেছে প্রচুর পরিমাণে পদ্মা-মেঘনা ও স্থানীয়ভাবে চাষকৃত মাছের আমদানি। তবে বিপনিবাগ বাজারে একটি দোকানেও ইলিশের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যার কারণ হলো এখন বাজারের চাইতে ফেরি করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ বেশি বিক্রি হয়। বিপনিবাগ বাজারে মাছ বিক্রেতা শ্যামল, আব্দুল কাদের, আব্দুর রহমান বলেন, তেলাপিয়া মাছ প্রতিকেজি বড় ২৮০ টাকা, মাঝারি ২২০-২৪০ টাকা, ছোট ১৫০-১৮০ টাকা। পাঙ্গাস ছোট (চাষের) ২৭০-৩২০ টাকা, বড় পাঙ্গাস (নদী) ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা। পোয়া মাছ ছোট ৪৫০ টাকা, বড় সাইজের ৭৫০ টাকা। রুই মাছ ছোট ২৮০ টাকা, মাঝারি ৩৭০-৪৫০ টাকা, বড় সাইজের রুই ৫৫০-৭৫০ টাকা। কাতলা বড় সাইজ ৬৫০ টাকা, ছোট সাইজ ২৮০-৩৫০ টাকা। গুড়া মাছ ৩৫০ টাকা ৪৫০ টাকা, গুড়া চিংড়ি ২৭০ টাকা, খলিশা, পুটিসহ মিশ্রিত মাছ প্রতি কেজি ৫শ’ ৫৫০ টাকা।
২৪ ডিসেম্বর, ২০২০।