চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) বিএনপির ভোট ব্যাংকে নজর আ.লীগের

একাদশ জাতীয় নির্বাচন : চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ)

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
সিআইপি বেড়ি বাঁধের ভেতরে প্রবাসী ও শিল্পপতি অধ্যুষিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা জাতীয় সংসদের বর্তমানে চাঁদপুর-৪ আসন নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক নিদর্শন ব্রিটিশ আমলের সাহেবগঞ্জ নীলকুঠির ও অত্যাচারী জমিদার লোহাগড়ের মঠ এখনো এ এলাকায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
তবে রাজনৈতিক সমীকরণে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনটি জাতীয়তাবাদী দলের ভোট ব্যাংক হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। ফলে ভোটের মাঠে জনসমর্থনের একক আধিপত্য বিএনপির থাকলেও গত ৫ বছরে এ অঞ্চলের মানুষ রয়েছে ভোটাধিকার বঞ্চিত। গত ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ আসনটি তাদের করে নেয়। তারপর থেকে সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার হারাতে থাকে। ফলে ভোটাররা এখন ক্ষুব্ধ তাদের ভোটাধিকার নিয়ে।
এই আসনে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের সূচনা হয়েছিল ’৯০ দশক থেকে। ফরিদগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির ৪ বারের এমপি আলমগীর হায়দার খানের হাতেই উন্নয়নের সূচনা হয়। বিএনপি’র দূর্গ হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জের এ আসনটি ’৯১ সাল থেকে বিএনপি’র দখলে। পরে নবম সংসদ নির্বাচনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে বিএনপির সংসদ সদস্য লায়ন মো. হারুনুর রশিদ পড়েন বেকায়দায়। ঐ সময়ে বিএনপি বিরোধী দলে থাকার উন্নয়ন কর্মকা-ে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন তিনি।
বর্র্তমানে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) সংসদীয় আসনে নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ ভোটার তালিকানুযায়ী মোট ভোটার ৩ লাখ ১ হাজার ৮শ’ ৭৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪শ’ ৩৭ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪শ’ ৩৬ জন।
চাঁদপুর-৪ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন- ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া এমপি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ সাগর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান ও স্থানীয় নেতা আমীর আযম রেজা। বিএনপির প্রার্থী হতে চান সাবেক সাংসদ লায়ন হারুনুর রশিদ, শিল্পপতি এমএ হান্নান, মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী, কেন্দ্রিয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ।
গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী এবং এ নিয়ে দুইবার আওয়ামী লীগ এ আসন নিজদের জয় নিতে পারলেও বাকি সময়টা বিএনপির কব্জায় ছিল। ২০০৮ সালে জেলার অন্য আসনসহ সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগের জয়জয়কার তখনো বিএনপির প্রার্থী লায়ন হারুনুর রশিদ সাংবাদিক শফিকুর রহমানকে পরাজিত করে ফরিদগঞ্জে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু খায়ের পাটোয়ারী বলেন, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পর থেকে আওয়ামী লীগের সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াকে নিয়ে এখনো ঐক্যবদ্ধ আছি। এলাকার বেশ রাস্তাঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন, কলেজ সরকারিকরণ এবং বিদ্যুৎসহ উন্নয়নমূলক কাজ হওয়ায় দলের বাইরেও সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে আওয়ামী লীগের প্রতি বলে দাবি করেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে একাদশ আগামি নির্বাচনে ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াই দলীয় প্রার্থী হবেন।
তবে এ আসন থেকে ফের দলীয় মনোনয়ন পাবেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শফিকুর রহমান- এমনটা আশাবাদ তার সমর্থকদের। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ সাগর দীর্ঘদিন ধরে ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া ও গণসংযোগ করছেন। চাঁদপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চাঁদপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম অ্যাড. সিরাজুল ইসলামের ছেলে, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবনেতা অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমানও উপজেলার আনাচে-কানাচে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ ও প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। সংসদ সদস্য মরহুম রাজা মিয়ার ছেলে ও স্থানীয় নেতা আমীর আযম রেজাও কিছুদিন যাবত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবে বলে প্রচারণা করছেন।
ফরিদগঞ্জ বিএনপির দূর্গ হিসেবে পরিছিত সামরিক স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকেই। ধারাবাহিক হিসেবে ২০০৮ সালেও এই রাজনৈতিক দলটি তাদের দূর্গে ফাটল ধরাতে দেয়নি। বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক ধরে রাখতে সক্ষম হয় বিএনপি। যার প্রমাণ মেলে ওই বছরে জেলার অন্য সবগুলো সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও একমাত্র এই ফরিদগঞ্জে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন নতুন প্রার্থী লায়ন মো. হারুনুর রশিদ। রাজনীতিতে ঐ সময় লায়ন মো. হারুনুর রশিদ ছিলেন নতুন মুখ।
ফরিদগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আমানত হোসেন গাজী বলেন, বিগত ২০১৩ সালের শেষে দিকে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে তা সহিংস রূপ লাভ করে। এসময় প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হাতে ছাত্রদল ও যুবদলের তিনজন কর্মী প্রাণ হারান। এছাড়া এ পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে যত মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে সবগুলোতেই কর্মীদের পাশে ছিলেন লায়ন হারুনুর রশিদ।
সাবেক সংসদ লায়ন হারুনুর রশিদ বলেন, দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সবধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি যেমন’ই হোক না কেন আগামি দিনেও তাদের পাশে থাকার ইচ্ছে আছে।