ফরিদগঞ্জে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে আটক ১২

আগুন বাহিনীর তাণ্ডব

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো
ফরিদগঞ্জে দুই দল মাদক কারবারির আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে একটি দল ফরিদগঞ্জের ও অপরটি পার্শ্ববর্তী উপজেলা হাইমচরের। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হাইমচর এলাকার কথিত আগুন বাহিনী পুলিশবাহী একটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাঙচুর করে। এই ব্যাপারে সিএনজি অটোরিক্সা চালক বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে ১২জনকে আটক করেছে। ঘটনাটি গত রোববার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের বিশকাটালি গ্রামে ঘটে।
আটকরা হলো- ফরিদগঞ্জের বিশকাটালি গ্রামের কাদির বেপারী (৩৯), মো. সোহাগ (১৯), রাকিব খন্দকার (২১), মো. আল আমিন (২৫), মাসুদ মোল্লা (৪০), মো. কবির হোসেন (৩৭), ফজলে রাব্বি (২০), চরদুঃখিয়া গ্রামের মো. আহসান হাবিব মিঠু (২০), হাইমচর উপজেলার চরকৃষ্ণপুর গ্রামের জাহিদ হাসান প্রঃ রিফাত (১৯), চরভাংগা গ্রামের মো. ফুয়াদ আলম পাটওয়ারী (২৮), রাসেল গাজী (৩৫) ও পশ্চিম চর কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. আতাউর রহমান সুজন (২৬)।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের বিশকাটালী এলাকায় রোববার মাদকসেবী দু’গ্রুপের আদ্যিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় আগুন বাহিনীর হামলায় ১০টি বসতঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে শতবর্ষী ফাতেমা বেগমসহ অন্তত ৮/১০জন আহত হয়েছে। তাছাড়া ৩টি খড়ের গাদায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে মো. বোরহান উদ্দিন, তহমিনা ও ফাতেমা বেগম জানান, রোববার বিকালে হাইমচর এলাকার (আগুন বাহিনী নামে পরিচিত) আল আমিন, জয় ও আরিফের সাথে ফরিদগঞ্জ এলাকার তানজিল ও রাজনের মারামারি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন সন্ধ্যায় হাইমচরের আল-আমিন ও জয়ের নেতৃত্বে আগুন বাহিনীর শতাধিক যুবক ফরিদগঞ্জের বিশকাটালী গ্রামের বেপারী বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তান্ডব চালিয়ে কমপক্ষে ১০টি বসতঘর কুপিয়ে ভাঙচুর করাসহ ৩টি খড়ের গাদা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এসময় তাদের হামলা ঠেকাতে ও হামলার শিকার হয়ে শতবর্ষী এক বৃদ্ধাসহ অন্তত ৮/১০জন আহত হয়। এসময় নারী-পুরুষ আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশের সামনেই ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে সরে পড়লে পুলিশের ব্যবহৃত সিএনজিটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয় তারা।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে এলাকাটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। একই বাড়ির মেজর আ. খালেদের বসতঘরও ভাঙচুরের শিকার হয়। মেজর আ. খালেদের অনুরোধে ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান বিএসসি জানান, সৃষ্ট ঘটনার সঠিক তদন্তসাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি। তাছাড়া কোন নিরপরাধী ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়। তিনি আরো জানান, হামলার কারণে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। হয়রানি থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য পুরুষদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ সত্যিকারের দোষীদের গ্রেফতার করুক, তবে নির্দোষ ব্যক্তিরা যেন হয়রানির শিকার না হয়।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন জানান, মাদক কারবারি দু’গ্রুপের আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সিএনজি অটোরিক্সা ভাঙচুরের ঘটনায় চালক রাকিব হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে। গতকাল সোমবার বিকালে হামলাকারী ও হামলার শিকার কোন পক্ষই থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

০২ আগস্ট, ২০২২।