মনিরুল ইসলাম মনির
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মতলব উত্তর উপজেলায় এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর তাই হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। চলতি বছরে উপজেলায় আখের চাষ হয়েছে ২১০ হেক্টর জমিতে।
ন্যায্য দাম পেয়ে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকের মুখে। গোটা দেশজুড়ে আখের বেশ চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মতলবের সুস্বাদু ও রসালো এ আখ মিষ্টি বেশি হওয়ায় পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। দেশীয় জাতের আখ (চাঁদপুর গেন্ডারি ও সিও-২০৮) চাষে চাঁদপুর জেলার সুনাম ও সুখ্যাতি বহু বছরের। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় দেশীয় জাতের সিও ২০৮ ও চাঁদপুর গেন্ডারি। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এ আখ অন্যতম।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভিতরে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২০০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২১০ হেক্টর জমিতে আখ আবাদ হয়েছে। গতবছর ১৮০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের আবাদ হয়েছে। যার তুলনায় এ বছর ৩০ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে এ বছর চাঁদপুর গেন্ডারি ৪৫ হেক্টর, সিও-২০৮ হয়েছে ২৫ হেক্টর, বিএসআরআই-৪১ হয়েছে ৬০ হেক্টর, বিএসআরআই-৪২ হয়েছে ৪৫ হেক্টর ও ঈশ্বরদী-৩৪ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৬২ টন। সেচ প্রকল্পের উঁচু জমিগুলো পলি ও দোআঁশ মাটির পরিমাণ বেশি থাকায় আখের ফলন প্রতি বছরই ভালো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মতলব উত্তরের কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড়, দশানী, বালুচর, শিকিরচর, ছোট হলদিয়া, নিশ্চিন্তপুর, নান্দুরকান্দি, লবাইরকান্দি, বড় হলদিয়া, সরদারকান্দি, ওটারটরম হাজীপুর, রাঢ়ীকান্দিসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা এখন আখ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে মিনি ট্রাক ও ট্রলারযোগে আখ নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি আখ ২৫-৩০ টাকা দরে কৃষকরা পাইকারি বিক্রি করছেন। ঢাকায় তা পাইকারি ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
ছেংগারচর পৌরসভার বারআনী গ্রামের কৃষক এনায়েত উল্ল্যা জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে আখ চাষ করছেন। এ বছর তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে নতুন জাতের রঙ্গ বিলাস আখের চাষ করেছেন। দেশীয় জাতের আখের চাইতে রঙ্গ বিলাস আখের বাজার দর অনেক বেশি। প্রতিটি আখের খুচরা দাম ৫০ টাকা।
হানিরপর গ্রামের গ্রামের কৃষক মো. আমান জানান, তিনি ১৯৯০ সালের পর থেকে আখের আবাদ করছেন। এ বছর আখ তিনি ক্ষেতেই পাইকারদের কাছে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার মুনাফা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকাররা কৃষকের ক্ষেত থেকে আখ কিনে তা শ্রমিক দিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুক্রবার সরেজমিন উপজেলার হানিরপাড় এলাকায় বেপারী মুক্তারসহ আরও কয়েকজন বেপারীকে আখ তুলতে দেখা গেছে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় চাঁদপুর গেন্ডারি, সিও-২০৮, বিএসআরআই ৪১, বিএসআরআই ৪২ ও ঈশ্বরদী-৩৪ জাতসহ ৫টি জাতের আখ চাষ হয়েছে। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে কৃষকরা যেন তাদের ফসল বাঁচাতে পারে সে জন্য যথাসময়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪।