খনন হলে উপকৃত হবে কয়েক হাজার কৃষক, বৃদ্ধি পাবে ফসল উৎপাদন
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
দখল, দূষণ ও আবর্জনা ফেলায় মৃতপ্রায় হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মিঠানীয়া খালটি। এতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির অভাবে বহুদিন ধরে মকিমাবাদ, খাটরা-বিলওয়াই, কাজিরগাঁও, দোয়ালিয়া ও মাতৈনসহ বেশ কিছু স্কীমের আওতাধীন মাঠের অধিকাংশ স্থানে ফসলের জমি অনাবাদী হয়ে পড়েছিল। খালটি পুনরুদ্ধার ও খননে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে কৃষক, এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরা দাবি জানিয়ে আসলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মিঠানীয়া ব্রিজের নিচে এবং খালের দুই পাশে (উত্তর ও দক্ষিণ) পাশে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আশপাশের এলাকার মানুষ আবর্জনা ফেলা এবং খালে কচুরিপানা, নেপিয়ারসহ অন্যান্য ঘাস ও আগাছার কারণে পানি প্রবাহে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া খালের উপরে থাকা ড্রেজার পাইপের জোড়া অংশের লিকেজ দিয়ে বালু পড়ার কারণে খালের মুখটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
এর পাশাপাশি মিঠানিয়া ব্রিজ নির্মাণের সময় খালের উপর বিকল্প সড়ক স্থাপন এবং ব্রিজ চালুর পর পরবর্তীতে ওই বিকল্প সড়কের মাটি ভালো সরিয়ে না নেওয়ার কারণে সেচের পানি প্রবাহে বিঘ্ন হচ্ছে। এতে প্রায় সহস্রাধিক একর জমির চাষাবাদ হুমকি মুখে। খালটি খনন করা হলে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদসহ হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রায় ১১টি স্কীমের কয়েক হাজার কৃষক উপকৃত হবেন এবং বাড়বে ফসলের উৎপাদন ও মিলবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৩নং ওয়ার্ডের ডাকাতিয়া নদী থেকে শুরু করে মিঠানিয়া খালটি হাজীগঞ্জ পৌরসভা হয়ে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন উপর দিয়ে বিভিন্ন খালের সাথে সংযোগ। এই খাল দিয়ে একসময় নৌকাযোগে উত্তরাঞ্চলের লোকজন চলাচল করতেন। বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরে মানুষ পারিবাহিক চাহিদা পূরণ করে এবং সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন।
এছাড়া খালটির সবচে বড় ভূমিকা ছিল ফসল উৎপাদনে। খালের পানি ব্যবহার করে পৌরসভাধীন ৩, ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের খাটরা বিলওয়াই ও মকিমাবাদ গ্রাম, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুদিয়া, মাতৈন, দোয়ালিয়া, মৈশাইদ, খাকবাড়িয়া, বাড্ডা, বাউড়া, শাহপুর, সুবিদপুর, মাড়ামূড়া ও কালচোঁ গ্রামের একাংশ প্রায় কয়েক হাজার কৃষক ফসল ফলাতেন। কিন্তু দিনে দিনে খালটি দূষণ ও দখলের কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি প্রবাহ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
বিশেষ করে পৌরসভাধীন এলাকার হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মিঠানিয়া ব্রিজের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে আবর্জনা, দখল ও দূষণের ফলে খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এভাবেই কয়েক বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে খালটি পুনরুদ্ধার ও খননে জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কাছে বহুবার বলা হলেও আশাহত হয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। অথচ এই খালটি দিয়ে সাত-আটটি বিলের পানি নিষ্কাশন ও ১১টি স্কীমের জমিতে পানি সেচ দিয়ে থাকে।
গতবছর স্ক্রীম ম্যানেজারদের উদ্যোগে এবং তাদের নিজস্ব অর্থায়নে মিঠানিয়া ব্রিজের দুই পাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করে সেচের পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এবছর আবারো খালের মুখটি ভরাট হয়ে গেছে।
অপরদিকে এই খালের আওতাধীন দোয়ালিয়া উজ্জ্বল স্কীমের ড্রেন (নালা) দিয়ে মাতৈন, সুদিয়া, বাড্ডা, বাউড়া ও শাহাপুরের একাংশসহ ৫ গ্রামের জমিতে পানি সেচ হয়ে থাকে। কিন্তু নালাটি সংস্কার না হওয়ায় এবং অসংখ্য ইঁদুরের গর্ত থাকার কারণে সব জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। এতে শতাধিক একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই, এই ড্রেনটিসহ অন্য সব ড্রেন পাকাকরণের আবেদন জানান তারা।
ওই সময়ে খাটরা-বিলওয়াই মাঠের স্কীম ম্যানেজার মো. আবুল হাসেম অভিমানের সুরে বলেন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ কতজনের কাছে কৃষকরা গিয়েছে, কোন কাজ হয়নি। সামনে হবে কিনা, তাও জানি না।
কথা হয় হোসেন মিজি, আব্দুল মালেক, এমদাদুল হক, মো. ইমান হোসেন ও মো. নজরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন কৃষকের সাথে। তারা জানান, এই অঞ্চলের জমিগুলো এক ফসলি। অর্থাৎ বছরে একবার ফসল উৎপাদন হয়। এই ফসল দিয়ে তাদের পারিবারিক জীবিকা নির্বাহ ও গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। অথচ মিঠানিয়া খাল ও স্কীমগুলোর আওতাধীন ড্রেনের সংস্কার না করার কারণে তারা চাহিদা অনুযায়ী সেচের পানি পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে দোয়ালিয়া উজ্জ্বল মাঠ স্কীমের ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান, মিঠানীয়া খালটি দ্রুত খননসহ স্কীমের ড্রেন পাকাকরণ প্রয়োজন। তা নাহলে কয়েক শতাধিক একর জমি অনাবাদী হবে। পাশাপাশি বর্ষাকালে এসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, খালটি খননের বিষয়ে বিএডিসি’র ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা হয়েছে। স্থায়ী কিছু করা যায় কিনা, এ বিষয়ে আমি ইউএনও মহোদয়সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
উপজেলা বিএডিসির কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মামুন রশিদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, খালটির পানি প্রবাহে স্থায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে এবং আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, খালটি খননসহ টেকসই ব্যবস্থাগ্রহণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪।