মতলব উত্তরে স্মরণকালে বৃহৎ জনসভা

একদিকে সংলাপ, অন্যদিকে ষড়যন্ত্র এটা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না
        ………………..মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি

মনিরুল ইসলাম মনির:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি বলেছেন, সংলাপ আর ষড়যন্ত্র একসাথে চলতে পারে না। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা এবং ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যার উপর গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা, এগুলো একই সূত্রে গাঁথা।
গতকাল শনিবার বিকালে মতলব উত্তরে ছেঙ্গারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় জেলহত্যা দিবসে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, পঁচাত্তরের এই দিনে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। দেশে এটা একটা নেক্কারজনক ঘটনা। সেদিন আমিও জেলে ছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যাই। ৩রা নভেম্বরের ঘটনা বিবরণ দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে যান তিনি। মন্ত্রী বলেন, আজকের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আগামি নির্বাচনে নৌকায় জয় নিশ্চিত করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ৩রা নভেম্বর মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কময়, রক্তঝরা ও বেদনাবিধুর একটি দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর ৩রা নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশ মাতৃকার সেরা সন্তান জাতীয় এই চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে একাত্তরের পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল। প্রগতি-সমৃদ্ধির অগ্রগতি থেকে বাঙালিকে পিছিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

গতকাল শনিবার মতলব উত্তরে জেলহত্যা দিবসের জনসভায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসা নেতা-কর্মীরা। -ইল্শেপাড়

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য একেএম রিয়াজ উদ্দিন মানিকের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুসের পরিচালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু।
আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওচমান গণি পাটোয়ারী, ত্রাণমন্ত্রীর সহধর্মিণী পারভীন চৌধুরী রীনা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুর আহমদ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুবর্ণা চৌধুরী বীনা, মতলব ইয়ং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশফাক হোসেন চৌধুরী মাহী, ছেঙ্গারচর পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম জজ, মতলব উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম লস্কর, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম সরকার ইমন, মতলব দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএইচ গিয়াস উদ্দিন, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী আইয়ুব আলী, কবির হোসেন মাস্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার, শাহজাহান প্রধান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিলুফা আক্তার, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি দেওয়ান জহির, সাধারণ সম্পাদক কাজী শরীফ, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পারভীন শরীফ, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মিনহাজ উদ্দিন খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক তামজিদ সরকার রিয়াদ প্রমুখ।
জনসভায় হাজার হাজার জনসাধারণ অংশগ্রহণ করে। সকাল থেকে ছেংগারচর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা লোকজন নিয়ে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করে। দুপুর নাগাদ কানায় কানায় মাঠ ভরে যায়। পুলিশ বাহিনীও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে পুরো মাঠ ও সভাস্থল। মাঠের চতুর্দিকের বিল্ডিংয়ের ছাদও ছিলে লোকে লোকারণ্য।