সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী আর নেই

 

ইলশেপাড় ডেস্ক
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি, নবম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি……রাজিউন)। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্ট থাকা অবস্থায় সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে জাতীয় সংসদের পরিচালক (গণসংযোগ) মো. তারিক মাহমুদ জানিয়েছেন।
৮৪ বছর বয়সী শওকত আলী কিডনি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। ২৯ অক্টোবর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লোনসিং বাহের দিঘীরপাড় গ্রামে ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন শওকত আলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেয়ার পর ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান। পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছিল, তাতে শওকত আলীকে ২৬ নম্বর আসামি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি ক্যাপ্টেন পদে থাকা অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তানে ক্যান্টনমেন্ট থেকে আটক করার পর ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
শওকত আলী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর আবার সেনাবাহিনীতে ফেরেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর শওকত আলীকে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। তিনি মুক্তিসংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং ৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়া হন এবং ১৯৭৯ সালে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন হন। সেবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের হুইপের দায়িত্ব পান তিনি।
শরীয়তপুরের ওই আসনটি থেকে এরপর আরও ৫ বার এমপি হয়েছেন শওকত আলী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নবম সংসদে যখন স্পিকার ছিলেন, তখন শওকত আলী ছিলেন ডেপুটি স্পিকার। দশম সংসদে তাকে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শওকত আলী ৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন।
জাতীয় সংসদের পরিচালক (গণসংযোগ) তারিক মাহমুদ জানান, গতকাল সোমবার মাগরিবের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শওকত আলীর জানাজা হয়। তার আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে রাখা হবে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সশস্ত্রবাহিনীর হেলিকপ্টারে তাঁর মরদেহ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। নড়িয়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে জোহরের নামাজের পর নড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে তার আরেক দফা জানাজা হবে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজের বাড়ি ‘স্বাধীনতা ভবন’ এর আঙ্গিনায় দাফন করা হবে শওকত আলীকে।
১৭ নভেম্বর, ২০২০।