হাইমচরে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, অভিযুক্ত স্বামী আটক

সাহেদ হোসেন দিপু

হাইমচরে ঘরের আড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় মিয়া নেপালের স্ত্রী পারুলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পারুলকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি সে আত্মহত্যা করেছে এ নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করেছে হাইমচর থানা পুলিশ। এলাকায় বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জানা যায়, গত শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টায় নিহত পারুলের ছোট মেয়ে সুমাইয়া চিৎকার করলে মৃত আবুল হোসেন পাটওয়ারীর স্ত্রী মারুফা খাতুন ঝুলন্ত পারুলকে দেখতে পেয়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। তিনি জানান, আমি এসে দেখি ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলে আছে পারুল। তিনি আরও জানান, পারুল বেগম কিভাবে মারা যায় সেটা জানি না। তবে গত পরশু পারুলের স্বামী মিয়া নেপালকে আমরা বাড়িতে দেখেছি। তাদের দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এমনকি মিয়া নেপাল পারুলকে মারধরও করে।

নিহত পারুল বেগম (২৬) উপজেলার পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর গ্রামের আ. সাত্তার আখনের ছোট মেয়ে। একই গ্রামের ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। পারুলের ৪ সন্তান শাহাদাত (১০), সুমাইয়া (৭), আশ্রাফ (৪) ও মুসা (৪ মাস)।

১২ বছর আগে ২০০৮ সালে প্রেমের মাধ্যমে মিয়া নেপাল এবং পারুলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর তখন থেকেই পারুলের উপর চলে নির্যাতন। চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে নারায়ণগঞ্জে থাকার সুবাদে ৪ সন্তানের জননী স্ত্রী থাকা সত্বেও আরেকটি বিয়ে করে মিয়া নেপাল। স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতেও যুবতী মেয়ের সাথে চলে তার ফস্টি-নস্টি। সেই থেকে প্রথম স্ত্রী পারুলের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, শারীরিক টর্চার ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে ৪ সন্তানের জননী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

এলাকাবাসী দাবি করছেন, এটি আত্মহত্যা নয় বরং হত্যা। কারণ, প্রতিরাতেই ভিকটিমের ছেলে শাহাদাত (১১) মায়ের সাথে ঘুমায়। কিন্তু গতরাতে তাকে দাদির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছেলে জানায়, তার বাবা তাকে দাদির কাছে চলে যেতে বলে। সকালে শুনে তার মায়ের ঝুলন্ত লাশ।

এ ব্যাপারে মিয়া নেপালের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সে জানায়, পারুলের মৃত্যুর ব্যপারে সে কিছু জানে না। সে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসতেও নারাজ। স্ত্রীর মৃত্যুতে তার কোনো আপত্তি নেই। সাংবাদিকরা তাকে ফোন করলে সে গালাগালিও করে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সে হাইমচর থানায় আত্মসমর্পণ করে। সে জানায়, আমি দীর্ঘদিন স্ত্রীকে কোনো ভরণপোষণ পাঠাই না, তার চলা সে কোনোভাবে চলতো।

হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম খান জানান, স্বামীর অত্যাচারে পারুল আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। বাদীপক্ষের মামলা ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

সর্বোপরি বলা চলে এটি কোনো আত্মহত্যা নয় বরং পরিকল্পিত হত্যা। তাই স্থানীয়রা ও পারুলের নিকটাত্মীয় সবাই প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় সঠিক তদন্ত করে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০।