হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা

সাহেদ হোসেন দিপু
কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম চলছে পুরাতন ভবনেই। যার ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নোংরা পরিবেশ রোগীদের আরো অসুস্থ করে তুলছে। হাসপাতালে স্বল্প পরিমাণে বেড থাকলেও রয়েছে নোংরা পরিবেশ। টয়লেটগুলোতে আরও বেশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সব মিলিয়ে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ১৯ জুন হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ মে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর অব. মো. রফিকুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। এসময় সংযোজন করা হয় অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, শক্তিশালী জেনারেটরসহ চিকিৎসা সহায়ক বিভিন্ন সুবিধাদি। পরবর্তী সময়ে পরিবেশগত কারণে এসব সুবিধা থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার ও শক্তিশালী জেনারেটর অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
২০১৯ সালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। যার ফলে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে পুরানো ভবনে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুরাতন ভবনে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা যেমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন তেমনি চিকিৎসকরাও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা সেবা দিতে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। এ বছরের শেষের দিকে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। নতুন বছরে নতুন ভবনে হাসপাতালে কার্যক্রম চালু হলে সেবার মান আরো উন্নত হবে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ছোট ল²ীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে গতকাল ভর্তি হয়েছি। এখানে এসে নার্স ও ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা কিছুটা ভালো পেলেও হাসপাতালের পরিবেশ দেখে খুবই খারাপ লাগলো। খাবার, সিট ও টয়লেটের পরিবেশ খুবই খারাপ। যাবতীয় চিকিৎসার সবকিছুই ফার্মেসী থেকে কিনে আনতে হয় আমাদের। সুস্থ হওয়ার চেয়ে এখানে অসুস্থতার পরিবেশ বেশি দেখছি।
চিকিৎসা নিতে আসা বিশকাঠালী গ্রামের রতœা বেগম জানান, আমি কিছুদিন আগে ডায়রিয়াজনিত সমস্যায় শিশু মেয়েকে নিয়ে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যাই। চিকিৎসক আমার মেয়েকে ভর্তি দেন। ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার পরে মেয়েকে সুস্থ করতে এসে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। ওয়ার্ডের বেডের নোংরা পরিবেশ ও বিদ্যুৎ চলে গেলে ভূতুড়ে পরিবেশ, বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর কিংবা সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। একদিন থেকেই আমি অসুস্থ হয়ে যাই, সিট না কেটে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মামুন রায়হান জানান, নতুন ভবন টেন্ডার হওয়ার পর আমাদের হাসপাতালের পুরনো ভবনের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়। আমরা অবশিষ্ট পুরনো ছোট ভবনে আমাদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। এক রুমে ৪ জন ডাক্তার বসে দৈনিক পাঁচশ’ রোগী দেখতে হয়। এতে আমাদের যতটা কষ্ট হয়, তার চাইতে বেশি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের কষ্ট পেতে হয়। রোগীরা যে বেডে থাকে তা অনেক অমানবিক। চিকিৎসা সেবা নিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ হতে একটি সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন যা এ হাসপাতালে নেই।
আমরা আশা করছি এ বছরের শেষেই ২০২৪ সালের নতুন বছর নতুন ভবনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা প্রদান করতে পারবো। নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু হলে। সব অসুবিধা সমস্যা সমাধান হবে। হাইমচরবাসী উন্নত চিকিৎসা পাবে। সংযোজন করা হবে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, শক্তিশালী জেনারেটরসহ চিকিৎসা সহায়ক বিভিন্ন সুবিধাদি।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পুরনো টিনশেট ভবনে ইনডোর আউটডোর করে কোনরকমভাবে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।
আগামি বছর মার্চ মাসের দিকে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন উদ্বোধন হলে চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে। এখন রোগীদের একটু কষ্ট হচ্ছে। আগামি দিনে হাইমচরে অপারেশনসহ সব চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। হাইমচরের মানুষ চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর যেতে হবে না, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সব ধরনের চিকিৎসা নিতে পারবে।

২৩ অক্টোবর, ২০২৩।