মনিরুল ইসলাম মনির
কয়েকদিনের অতি বৃষ্টির কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মতলব উত্তর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে সড়ক। অলিগলি-বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। সড়কে আটকা পড়েছে যানবাহন। চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। প্রবল বর্ষণে দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতায় ফের ভোগান্তিতে পড়েছেন মতলব উত্তর উপজেলার মানুষ।
কয়েকদিন মতলব উত্তর উপজেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পানিতে মতলব উত্তর উপজেলাধীন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন বিলের ফসলি জমি, মৎস্য প্রজেক্ট, বনায়ন প্রকল্প, ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তায় পানি ওঠার কারণে শত শত পরিবার পানিতে আটকা পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্পের বিলগুলোতে রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সেচ খালগুলো বন্ধ থাকায় পানি টানতে পারছে না। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।
তিন দিনের অতি বৃষ্টির কারণে উপজেলার নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যত্রতত্র বাড়িঘর নির্মাণ, এমনকি ছোট ছোট খালে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করায় বৃষ্টি হলেই সেচ প্রকল্প জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এজন্য আশপাশের নালা-খালগুলো পরিষ্কার করে ফেলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে সেচ প্রকল্পের তালতলী, ঝিনাইয়া, আদুরভিটি, ঠাকুরচর, ঘনিয়ারপাড়, ওটার চর, পাঁচআনী, মাথাভাঙা, হানিরপাড়, লতরদি, নাউরী, আমিয়াপুর, সাদুল্লাপুর, দুর্গাপুর, জীবগাও, কালিপুর, মিঠুর কান্দি, ব্রাহ্মণচক, সুজাতপুর, কৃষ্ণপুর, নয়াকান্দি বিলসহ কমপক্ষে ৪০টি বিল ডুবে গেছে।
এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে পানিতে একাকার হয়ে গেছে। মেঘনা নদী তীরবর্তী এ বিলগুলোর পানি নদীতে নিষ্কাশন হতে পারছে না। গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। বেরিয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ। সবজি ক্ষেতগুলো ভাসছে পানিতে। মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় গ্রামের সড়কের ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার মাছের ঘেরও তলিয়ে গেছে।
মতলব উত্তর উপজেলার জোরখালী গ্রামের মাছ চাষি হাজি বাবুল হোসেন জানান, অতিবৃষ্টির কারণে ভেসে গেছে মাছের ছোট বড় ঘের ও পুকুর। তলিয়ে গেছে বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম সরকার বলেন, মতলব উত্তর উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকা এখনো পানির নিচে। যত্রতত্র খালে জালদিয়ে বেড় দেওয়া, অপরিকিল্পিত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সরকারি খালগুলো দখলের ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভেস্তে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নিচু এলাকা তলিয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
গজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদ উল্লাহ প্রধান জানান, কয়েকদিন যে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে তাতে চারদিকে পানি থৈ-থৈ করছে। বৃষ্টির পানি বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার হাজারও পরিবার।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একি মিত্র চাকমা জানান, বৃষ্টির কারণে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।
মেঘনা ধনাগোদা পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার আলাউদ্দিন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং কিছু লোক সরকারি খাল ও ক্যানেল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে বৃষ্টি আসলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
২৯ আগস্ট, ২০২৪।