বিশ্বশান্তির মূর্তপ্রতীকের মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম

মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম :
বিশ্বজাহানে যা কিছু আছে, সব কিছুরই সৃষ্টি এক মহাঅতিথিকে কেন্দ্র করে। চাঁদ যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে চলে, লাখ তারকা যেমন খেলে বেড়ায় চাঁদের চারদিকে, গোলাপের সুরভি ছোঁয়ায় যেমন গুলবাগিচার ফুলগুলো সৌরভ খোঁজে, হাজারো নদীনালা-খালবিল যেমন প্রাণ পায় সাগর-মহাসাগর থেকে; তেমনি বিশ্বজাহান আলোকিত হয়েছে এক মহাঅতিথির আগমনে। সুরভিত হয়েছে তাঁর ঘ্রাণে, প্রাণ পেয়েছে তাঁর পরশ থেকে। সেই মহামনীষী আর কেউ নন, তিনি আমাদের নবি-বিশ্বনবি, কুল কায়েনাতের জন্য যিনি রহমতস্বরূপ; যিনি উম্মতের কা-ারি, মানবতার মুক্তিদূত বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ স.।
আরব দেশের মক্কা নগরের কোরাইশ বংশে এক আলোর দ্যুতি ঠিকরে পড়েছিল আজ হতে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে। সে আলোকরশ্মি প্রত্যক্ষ করতে সমগ্র সৃষ্টি অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষ্যমাণ ছিল। আকাশ, জমিন, নক্ষত্ররাজি, বায়ুম-ল, নভোম-ল ও ভূম-লের সব মাখলুকাত এক কথায় কুল কায়েনাত সেই মহান অতিথির আগমনের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিল। শুভ্র আকাশের মেঘপুঞ্জ নেচে নেচে যার প্রশংসাগাঁথা গাইছিল, বাতাসের হিল্লোল যার শুভাগমন আনন্দে পাতাগুলোকে দুলিয়ে নৃত্য প্রদর্শনে বাধ্য করছিল, মহাসমুদ্রের ঢেউয়ের নাচন আনন্দের আতিশয্যে যার কদমবুচির আগ্রহে নিক্কণধ্বনি তুলছিল, পা-ুর বৃক্ষরাজি বিচিত্র পত্রপল্লবে সৃজিত পাখা নিয়ে যাকে বাতাস করে ধন্য হবার স্বপ্নবিভোর ছিলÑ তিনি বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত হযরত মোহাম্মদ স.।
নবিজির সৃষ্টি সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে খোদ আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমি মোহাম্মদকে সৃষ্টি না করলে সমগ্র সৃষ্টিজগতের কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এতে অতি সহজেই অনুমেয় যে, যাকে সৃষ্টি না করলে বিশ্বজাহানের কিছুই অস্তিত্বে আসত না, যার বদৌলতে সমগ্র মাখলুকাত সৃষ্টিÑ তাঁর আগমনে সেদিন সৃষ্টিজগৎ কতটা উল্লাসে মেতেছিল, হুর-পরি কতটা সাজে সেজেছিল। অবশেষে সকল সৃষ্টির প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার সুবহে সাদিকের নির্মল প্রকৃতিতে মানবের মাঝে আগমন করেন এক মহামানব, অতিমানব হযরত মোহাম্মদ স.।
ঐতিহাসিকরা নবিজি স.-এর আগমন তারিখ নিয়ে মতভেদের দোলাচলে দোল খেয়েছেন। অধিকাংশের মতে, তার জন্মতারিখ ৯ রবিউল আউয়াল। এছাড়া ৭, ৮, ১১, ১২ রবিউল আউয়াল সম্পর্কেও কেউ কেউ মত দিয়েছেন। আমাদের উপমহাদেশে সুদীর্ঘকাল হতেই ১২ রবিউল আউয়াল মহানবি স.-এর জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে ১২ রবিউল আউয়াল যে মহানবি স.-এর ওফাত দিবস এতে সব ঐতিহাসিকই ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
মোহাম্মদ স. বিশ্বনবি। পৃথিবী সৃষ্টির পর হতে মানুষকে হেদায়াতের সোনালি পথে আনতে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে প্রায় দু’ লক্ষ চব্বিশ হাজার নবি-রাসুল পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তন্মধ্যে মাত্র একশ’ চারজন রাসুলের ওপর আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হয়। এ একশ’ চারজন কিতাবপ্রাপ্ত নবি ছাড়াও দু’ লক্ষাধিক নবি-রাসুলই মহানবি স.-এর উম্মত হওয়ার জন্যে আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন। অন্যান্য নবি-রাসুল আগে পৃথিবীতে আগমন করলেও মহানবি স.কে আকর্ষণ হিসেবে আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ হিসেবে ধরিত্রীর মাঝে প্রেরণ করেন। তাইতো তিনি শেষ নবি, তিনি খাতামুন্নাবিয়্যীন।
মোহাম্মদ সা. এক আদর্শ মহামানব। এর স্বীকৃতিস্বরূপ খোদ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেনÑ নিশ্চয় তোমাদের জন্যে আল্লাহর রাসুল এর জীবনে রয়েছে অনুপম আদর্শ। তিনি মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে আদর্শ। শিশু, যুবা, আবালবৃদ্ধবনিতা নির্বিশেষে তিনি সবার জন্যেই মুক্তির দিশারি। ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, পেশাজীবীÑ সবার জীবনেই তিনি আদর্শ।
নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক গ্রন্থে মহানবি স.-এর আগমন মুহূর্ত সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি মা আমেনার পবিত্র গর্ভ হতে অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুর ন্যায় ভূমিষ্ট হননি। শুভ্র বসনের এক প্যাকেটজাত প্রক্রিয়ায় তিনি ধরাধামে আগমন করেন। একই সাথে অন্যান্য শিশুর ন্যায় চিৎ হয়ে ভূমিষ্ঠ না হয়ে তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন উপুড় হয়ে। অর্থাৎ লজ্জাস্থান যে মানুষের দৃষ্টি হতে চরম হেফাজতের বস্তু, তা শিশুনবির জন্মের মাধ্যমেই পৃথিবীবাসী অবলোকন করতে সক্ষম হয়েছে।
মহানবি স. তখন শৈশবের গ-ি পেরিয়ে সতেরো বছরের বালক। তিনি দেখলেন, আরব দেশে বংশানুক্রমে গোত্রবিভেদ চরম আকার ধারণ করে আছে। একে কেন্দ্র করে ক’দিন পরপরই মারামারি হানাহানি হয়। বালক মোহাম্মদের অন্তরাত্মায় ব্যাপারটি দারুণভাবে বেদনার হুল ফুটাল। তিনি ভাবলেন, যে করেই হোক মানবতাকে এ দুর্বিষহ জীবন হতে মুক্তি দিতেই হবে। কিন্তু প্রক্রিয়া কী? আরববাসীর অস্থিমজ্জায় বংশ পরম্পরায় যে প্রতিশোধের দাবানল জ্বলে আছে, তা হতে অত সহজেই কি তাদেরকে মুক্তবিহঙ্গে নিয়ে আসা যাবে? তিনি নিজ বয়সি তেরোজন বালককে তার ব্যথাটি বোঝাতে সক্ষম হলেন। তারা বালক মোহাম্মদকে এ ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রত্যয়দীপ্ত হলেন। তিনি মাত্র সতেরো বছর বয়সে প্রতিষ্ঠা করলেন সেবামূলক সংগঠন ‘হিলফুল ফুজুল’। এ হিলফুল ফুজুলের পরশে এসে সে যুগের যুবসমাজ এক বেহেশতি পরিবেশ খুঁজে পেল। ক্রমেই গোত্রবিদ্বেষ ছাইচাপা পড়তে শুরু করল। যৌবনের তারণায় যুবসমাজ যেসব অপকর্মে লিপ্ত হয়, বালক মোহাম্মদের পাশে এসে তারা হয়ে ওঠল সোনার মানুষ। উলঙ্গপনা, বখাটেপনা, ইভটিজিং, মাদকাসক্তি যে বয়সি যুবকদের নিত্যদিনের কর্ম, তারা মোহাম্মদের মিশনে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠলো এর প্রতিরোধ আন্দোলনের জানবাজ সৈনিক। তাইতো বালক মোহাম্মদ এক অতুলনীয় আদর্শ। আজকের সমাজ যদি বালক মোহাম্মদের এ নৈতিকতার পরাকাষ্ঠা হতে শিক্ষা নিত, তাহলে অবশ্যই আমরা এক সোনালি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হতাম।
আমানতদারির ক্ষেত্রে মোহাম্মদ স.-এর তুলনা দুষ্প্রাপ্য। সেই জাহেলি যুগের পৌত্তলিকতায় আচ্ছন্ন মানুষগুলো পর্যন্ত মহানবি স.কে শ্রেষ্ঠ আমানতদার বলে বিশ্বাস করত। তাইতো তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে ‘আল-আমিন’ বা ‘মহাবিশ্বাসী’ বলে উপাধি দিয়েছিলা অতএব, আমানতদারির ক্ষেত্রে মোহাম্মদ স.-এর মতো দ্বিতীয় কাউকে বিশ্বইতিহাসে খুঁজে পাওয়া শাদা কাকের ন্যায়ই বিরল।
শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে মহানবী স. অনুপম আদর্শ। ‘শ্রমিকের ঘাম শুকাবার আগেই তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও’ বলে বিশ্বনবী স. যেই চিরন্তন উক্তি উচ্চারণ করে গেছেন, তা কালের আবর্তে গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শ্রমের সঠিক মূল্য না পাওয়ার কারণেই আমাদের দেশে ক’দিন পর পর আন্দোলন-সংগ্রাম তীব্র আকার ধারণ করে। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যে আট শ্রমিক জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, তাদের স্মরণ করতে আজ বিশ্বপরিম-লে আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার দিবস পালিত হয়ে থাকে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে শ্রমিকদরদি মোহাম্মদ সা.-এর প্রদত্ত উপর্যুক্ত উক্তি যদি আজকের মালিকসমাজ সঠিকভাবে গ্রহণ করে, তাহলে মানুষ সত্যিই এক অনুপম পরিবেশ খুঁজে পেত। একইভাবে মহানবি স. নিজে উটের লাগাম ধরে পালাক্রমে শ্রমিককে উপরে বসিয়ে টেনে নেয়ার নজির গোটা বিশ্বে দ্বিতীয়টি আছে কি?
নারীর অধিকার বাস্তবায়নে মহানবি স.-এর অনুপম আদর্শ বিশ্বনন্দিত। যেই যুগে মেয়েসন্তান জন্মানোকে কৌলীন্যের চাবিকাঠি মনে করা হত, মেয়েসন্তান জন্মালে তাকে জীবিত গর্তে প্রোথন করে হত্যা করা হত। এহেন অমানবিক ও জঘন্য অপরাধ আরব সমাজকে বিশ্বদরবারে আজও নিন্দিত ও ধিক্কার দিয়ে আসছে। বিশ্বনবি স. জাহেলি যুগের সেই কলুষিত অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে আরব জাতিকে সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছিলেন।
বিশিষ্ট সাহাবি হযরত দাহিয়া কালবী রা. হযরত মোহাম্মদ স.-এর কাছে তার জাহেলি যুগের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমার একটি কন্যা ছিল। সে আমাকে খুব ভালোবাসত। তাকে নাম ধরে ডাকলে সে দৌড়ে কাছে আসত। একদিন আমি তাকে ডাকলাম। তাকে সাথে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। পথে একটি কুয়া পেলাম। তার হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিলাম। তার যে শেষ কথাটি আমার কানে ভেসে এসেছিল। তাহলোÑ হে আব্বা! হে আব্বা! একথা শুনে রাসুলুল¬াহ স. কেঁদে ফেললেন। তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল।
উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন বললেন, ওহে! তুমি রাসুলুলা¬হ স.কে শোকার্ত করে দিয়েছ। রাসুলুল্লাহ স. বললেন, তোমরা তাকে বাধা দিও না। যে বিষয়ে তার কঠিন অনুভূতি জেগেছে সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতে দাও। তারপর তিনি বললেন, তোমার ঘটনাটি আবার বর্ণনা করো। সে ব্যক্তি আবার তা শোনালেন। ঘটনাটি আবার শুনে তিনি এত বেশি কাঁদতে থাকলেন যে, চোখের পানিতে তার দাড়ি মোবারক ভিজে গেল। এরপর তিনি বললেন, জাহেলি যুগে যা কিছু করা হয়েছে আল¬াহ তা মাফ করে দিয়েছেন। এখন নতুন করে জীবন শুরু করো। (সুনানুদ দারেমী)
এমন অসংখ্য নির্মম হত্যাযজ্ঞ আরব সমাজে ঘটেছিল। ইসলাম-পূর্ব যুগে কন্যা সন্তানদের প্রতি কাফের-মুশরিকদের আচরণ ছিল অত্যন্ত কুৎসিত ও জঘন্য।
যেই সমাজে নারীকে অসুর মনে করা হত, নারীর অধিকার বলতে যে সমাজে কিছুই ছিল নাÑ সেই যুগে বিশ্বনবি স. ঘোষণা করলেনÑ ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বললেন, পুরুষের যেমন অধিকার রয়েছে, মহিলারও সমান অধিকার রয়েছে। তিনি আরও বললেন, ‘সে-ই সবচে’ ভালো পুরুষ, যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো’। নারীমুক্তির অগ্রদূত মহানবি স.-এর এসব বাণী হতে নারীজাতি পেল তাদের বেঁচে থাকার অধিকার। পেল প্রকৃত স্বাধীনতা। তাইতো তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনের মহান আদর্শ।
একজন ব্যবসায়ী হিসেবে মহানবী স. বিশ্ববাজারে আদর্শ। তিনি নিজেই ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বপ্রকার ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় নিতে তিনি নিষেধ করেছেন। একবার তিনি নিজেই এক বণিক কাফেলার কাছে কাপড় বিক্রি করেন। ঘটনাক্রমে ঐ কাপড়ের গাইটের এক স্থানে কিছুটা খুঁত ছিল। তিনি ভুলক্রমে বিষয়টি তাদেরকে বলেননি। বণিক কাফেলা বহুদূর যাওয়ার পর ব্যাপারটি প্রিয়নবি স.-এর মনে পড়ে। তিনি তৎক্ষণাৎ ঘোড়া হাঁকিয়ে তাদের কাছে গিয়ে ব্যাপারটি তাদেরকে অবহিত করে খুঁতের কারণে অতিরিক্ত মূল্য তাদেরকে ফিরিয়ে দেন।
আরেকবার তিনি বাজারে গিয়ে এক খেজুর বিক্রেতার ঝুড়িতে নিজ হাত ঢুকিয়ে দেখেন খেজুরের ঝুড়ির নিচের অংশে ভেজা খেজুর ও উপরে শুকনো খেজুর। তিনি বিক্রেতাকে ভর্ৎসনা করে এমন প্রতারণার ব্যবসা হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা সঠিক ওজনে পরিমাপ কর’। বিশ্বনবী স.-এর এ সুন্দর আদর্শ আজ যদি আমাদের সমাজে বলবৎ থাকত, তাহলে সত্যিই এক সোনালি সমাজ অবলোকন করা সম্ভব হতো।
দোলনা হতে কবর পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তথা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আইন-কানুন, দ-বিধি যে বিভাগেই হোক না কেন, সর্বত্রই রাসুল স.-এর অনুপম আদর্শ রয়েছে। বর্তমান দুনিয়ার সর্বত্র মহানবি স.-এর প্রদর্শিত আদর্শ অনুসরণ করলে সত্যিকারের কল্যাণরাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব।
আজকের সমাজে প্রিয়নবি স.-এর আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণের বড়ই অভাব। আমরা শুধু মজাদার সুন্নাতগুলো অনুসরণ করি। দুপুরে খাওয়ার পরে একটু বিশ্রাম নেওয়া, খাওয়ার পরে ফল বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া, উত্তম পোশাক পরাÑ ইত্যাকার সুন্নাত পালন করেই তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলি যে, আমরা সুন্নাত পালনের দায় হতে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম তাদের দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত সামগ্রিক জীবন সাজিয়েছেন প্রিয়নবি স.-এর আদর্শের রঙে। বাঁধার পাহাড় মাড়িয়ে, সকল প্রকারের লোভ বিসর্জন দিয়ে, নির্যাতনের স্টিম রোলারের সামনেও তারা নবিজির আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণ থেকে এক চুল পরিমাণ পিছপা হননি। এটাই ছিল নবির প্রতি তাদের প্রকৃষ্ট ভালোবাসার নজরানা।
তাইতো শিশু-কিশোরের জন্য রয়েছে আল আমিন খ্যাত মোহাম্মদ স.-এর আদর্শ; যুবকের জন্য রয়েছে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে হিলফুল ফুযুল প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ স.-এর আদর্শ; ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে চাচা আবু তালিব ও উম্মুল মুমিনীন খাদিজা রা.-এর অর্থে সুদূর সিরিয়ায় গিয়ে পণ্য কেনাবেচার আদর্শ; রাজনীতিবিদের জন্য রয়েছে হোদায়বিয়ার সন্ধি ও মদিনাসনদ প্রণেতা রাসুলুল্লাহ স.-এর আদর্শ; রাষ্ট্রপরিচালকদের জন্য রয়েছে রাজা-প্রজার ভেদাভেদমুক্ত আদর্শ রাষ্ট্র নির্মাতা বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক মোহাম্মদ স.-এর আদর্শ; নারীদের জন্য রয়েছে ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’ উক্তির প্রবক্তা বিশ্বনবি স.-এর আদর্শ। এভাবে শ্রমিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, পেশাজীবী তথা প্রতিটি নাগরিকের জন্যই প্রিয়নবি স.-এর জীবনে রয়েছে অনুপম আদর্শ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহানবি স.-এর আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণ করতে পারলে আজও ফিরে পাওয়া সম্ভব হানাহানিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, ভেদাভেদমুক্ত সোনালি সমাজ। গড়ে তোলা সম্ভব এক স্বপ্নের পৃথিবী। লাভ করা সম্ভব অনাবিল সুন্দর আগামী।
লেখক : বেতার ও টেলিভিশন আলোচক; বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও কলাম লেখক।