এস এম সোহেল
চাঁদপুর শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী (৪৮) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার বিকেলে শহরের ষোলঘর ওয়াপদা কলোনীর জরাজীর্ণ ৪ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষিকার বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলায়। তার স্বামী অলক গোস্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। স্বামীর সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনীতে বসবাস করতেন তিনি। তার ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে অনন্যা গোস্বামী এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত, ছোট মেয়ে তন্বী গোস্বামী এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং একমাত্র ছেলে পার্থ স্বারতী গোস্বামী ঢাকার নটরডেম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল বাবুল জানান, নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তী পারিবারিক কাজের জন্য গতকাল রোববার বিদ্যালয় থেকে ছুটি নেন। বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী জয়ন্তী চক্রবর্তীর জন্মতারিখ ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ। তিনি ১৯৯০ সনের ১৬ মে চাকরিতে এবং ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তার স্বামী অলক গোস্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি এলপিআরে আছেন।
চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই শিক্ষিকার কাছে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে গেলে বাসার দরজা খোলা ও শিক্ষিকার গলা কাটা অবস্থায় মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ‘৯৯৯’ নম্বরে কল দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। শিক্ষিকার বড় মেয়েকে নিয়ে তার স্বামী সকালে ঢাকায় যান। ওই শিক্ষিকা বাসায় একাছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে রোববারের জন্য ছুটি নিয়েছেন। ঘটনার সময় তার পরিবারের অন্য কোন সদস্য বাসায় ছিলো না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাসায় এসে শিক্ষিকার মরদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। বিষয়টি আমাদের প্রথমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান। তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে আসি। ইতোমধ্যে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওই শিক্ষিকাকে ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে গলা কাটা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করছে। গতকাল রোববার দুপুরের কোন এক সময় ঘটনাটি ঘটেছে। শিক্ষিকার ৩ ছেলে-মেয়ে ঢাকায় পড়া-শুনা করেন। ওনার স্বামী কোন কাজে সকাল ৯টায় লঞ্চযোগে ঢাকায় গিয়েছেন। পুরো ঘটনাটি পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে, কি কারণে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। ওই বাসায় টিভি চলছে এবং বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরতে দেখা গেছে। বাসায় ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও ব্যাগে কিছু টাকাও রক্ষিত আছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাব।
২২ জুলাই, ২০১৯।